রপ্তানি পতন অব্যাহত: অক্টোবরে ৭.৪৩% কমে ৩.৬৩ বিলিয়ন ডলার, আমদানিও নেমে আসছে ধীরে ধীরে

৪ নভেম্বর, ২০২৫ | ৭:২১ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের পতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে, যা অর্থনীতির জন্য নতুন উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-এর সর্বশেষ তথ্যমতে, অক্টোবর মাসে দেশের মোট রপ্তানি ৭.৪৩ শতাংশ কমে ৩.৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে। এটি গত দুই মাসের পতনের ধারাবাহিকতা, যা রপ্তানিকারকদের মধ্যে আরও বেশি হ্রাসের আশঙ্কা জাগিয়েছে। একই সঙ্গে আমদানির পরিমাণও ধীরে ধীরে কমছে, যা বৈদেশিক মুদ্রার সংকট এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রতিফলন। আগস্ট মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, দেশের আমদানি ৪.৮৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যা জুলাই মাসের ৫.৮ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হ্রাস। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত পাঁচ বছরে বাণিজ্য ঘাটতি ধীরে ধীরে বাড়ছে, যা রপ্তানি-আমদানির ভারসাম্যহীনতার স্পষ্ট সূচক। রপ্তানির ক্ষেত্রে এই পতন আরও আশংকাজনক। অক্টোবরের ৭.৪৩ শতাংশ হ্রাসের আগে সেপ্টেম্বরে রপ্তানি ৫.২ শতাংশ কমেছিল, এবং আগস্ট মাসেও অনুরূপ প্রবণতা দেখা গিয়েছিল। জুলাই মাসে রপ্তানি ৪.০৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হলেও, জুনের ৩.৪০ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় এটি সাময়িক ছিল। বিশ্বব্যাংকের এপ্রিল ২০২৫-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ অর্থবছরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য হ্রাস এবং বিনিয়োগের অভাব অর্থনীতির গতি কমিয়েছে। ফলে ২০২৫ সালে আরও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। রপ্তানিকারকরা এখন আরও বেশি হ্রাসের আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)-এর সদস্যরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারের চাপে রপ্তানি আরও কমতে পারে। বিজিএমইএ-এর সাবেক চেয়ারম্যান রুবিনা খান বলেন, “এই পতন অব্যাহত থাকলে লক্ষাধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থান বিপন্ন হবে। সরকারের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ দরকার, যেমন কর ছাড় এবং রপ্তানি উৎসাহী প্রণোদনা।” আমদানির পতনও অর্থনীতির জন্য দ্বিমুখী তলোয়ার। একদিকে এটি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে সাহায্য করছে, অন্যদিকে কাঁচামালের সরবরাহকারী শিল্পকারখানাগুলোর উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে তুলছে। ট্রেডিং ইকোনমিক্সের তথ্যমতে, ২০২০ সাল থেকে আমদানি ধারাবাহিকভাবে ৮.৮২ শতাংশ কমেছে, যা বর্তমান সংকটের সঙ্গে মিলে যায়। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রপ্তানি-আমদানির এই অসমতুল্যতা দূর করতে সরকারকে নীতিগত সংস্কার এবং বৈদেশিক বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়াতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের এই প্রবণতা আরও উদ্বেগজনক। বিশ্বব্যাংকের অনুমানে, ২০২৫ সালে অঞ্চলের গড় প্রবৃদ্ধি ৫.৮ শতাংশে নেমে আসবে, যার মধ্যে বাংলাদেশের অবদান কম হতে পারে। রপ্তানিকারকদের আহ্বান, সরকারের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ ছাড়া এই পতন আরও গভীর হবে, যা দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে বাধাগ্রস্ত করবে। বিশ্লেকরা বলছেন, ইউনূস সরকারের সময়ে নীতিনির্ধারণে অনিশ্চয়তা, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের অভাব এবং ব্যাংক খাতের দুর্বলতা মিলিয়ে অর্থনীতি ক্রমেই ভেঙে পড়ছে। রপ্তানি, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান সব ক্ষেত্রেই দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। যেখানে একসময় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির মূল ভিত্তি ছিল তৈরি পোশাক ও বেসরকারি বিনিয়োগ, সেখানে এখন উভয় খাতই সংকটের মুখে। এক অর্থনীতিবিদের ভাষায়, ‘অর্থনীতি এখন জীবনরক্ষার পর্যায়ে আছে। দ্রুত বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ না নিলে সামনের দিনগুলো আরও কঠিন হতে পারে।’