৯ হাজার তরুণকে ‘প্যারামিলিটারী’ ধাঁচের প্রশিক্ষণ: আশঙ্কা ‘গোপনে রিজার্ভ বাহিনী’ গড়ার চেষ্টা!

২ নভেম্বর, ২০২৫ | ১১:৫৯ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করে প্রায় ৯ হাজার তরুণ-তরুণীকে ‘আত্মরক্ষামূলক মৌলিক প্রশিক্ষণ’ প্রদানের সরকারি উদ্যোগ তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সমালোচকদের অভিযোগ, এই বৃহৎ আয়োজনটি যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ব্যক্তিগত পৃষ্ঠপোষকতা এবং স্বেচ্ছাচারিতার ফসল। নীতিনির্ধারকদের একাংশ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, এটি কার্যত সরকারের অর্থে উপদেষ্টার অধীনে একটি ‘অঘোষিত রিজার্ভ বাহিনী’ বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক শক্তি গঠনের প্রচেষ্টা। চলতি মাসেই বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) সাতটি আঞ্চলিক কেন্দ্রে ১৫ দিনের এই আবাসিক প্রশিক্ষণ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও এই প্রশিক্ষণ কোন জাতীয় নীতিমালা বা কোন সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তা সংকটের প্রেক্ষাপটে নেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে জনমনে রয়েছে নানাবিধ প্রশ্ন। স্বেচ্ছাচারিতা ও গোপন বাহিনী গড়ার অভিযোগ আলোচনায় থাকা এই প্রশিক্ষণের পেছনে এককভাবে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ব্যক্তিগত উদ্যোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে উপদেষ্টার একাধিক পদক্ষেপের ধারাবাহিকতা হিসেবেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারি নথিতে এটিকে ‘আত্মরক্ষামূলক মৌলিক প্রশিক্ষণ’ হিসেবে অভিহিত করা হলেও, প্রকল্পের কাঠামো, প্রশিক্ষণের ধরণ এবং বিশাল তহবিলের উৎস বিশ্লেষণ করে সমালোচকরা বলছেন—এটি রাষ্ট্রের অর্থ খরচ করে উপদেষ্টার নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে একটি প্যারামিলিটারী ধাঁচের শক্তি তৈরির চেষ্টা। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, দেশে এমন কী নিরাপত্তা সংকট তৈরি হয়েছে যার কারণে কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এত বৃহৎ পরিসরে উঠতি বয়সি তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে একটি অঘোষিত রিজার্ভ বাহিনী গড়ে তুলতে হবে? অনেকেই এই উদ্যোগটিকে অত্যন্ত স্পর্শকাতর উল্লেখ করে একাত্তর-পরবর্তী সময়ে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের ‘রক্ষী বাহিনী’ গঠনের একটি নমুনার সঙ্গে তুলনা করছেন, যা পরবর্তীতে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। উপদেষ্টার ভাষ্য: গণপ্রতিরক্ষা ও রিজার্ভ ফোর্স প্রশিক্ষণটির যৌক্তিকতা নিয়ে ওঠা সমালোচনার জবাবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। এ বিষয়ে তাঁর ভাষ্য, “এটি হচ্ছে গণপ্রতিরক্ষা বাস্তবায়নের জন্য, বাংলাদেশের ভৌগোলিক বাস্তবতায় যা অপরিহার্য। আর প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা ভবিষ্যতে দেশের রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে কাজ করতে পারবে।” তবে এই প্রকল্পটি দেশের জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতিমালার আওতায় পড়বে কিনা, অথবা সরাসরি কোন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় পরিচালিত হবে—তা নিয়ে স্পষ্ট কোনো জবাব মেলেনি। জাতীয় নীতিমালার অনুপস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষকের উদ্বেগ জাতীয় নিরাপত্তা ও সামরিক কাঠামোর বাইরে গিয়ে এত বড় একটি প্রশিক্ষণের উদ্যোগকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দেখছেন দেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ন ম মুনীরুজ্জামান এই প্রসঙ্গে বলেন, “বিভিন্ন দেশে যে প্রশিক্ষণ আছে, সেটার ব্যাপারে একটা ডিটেইল ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি আছে। যেটা কোনো মন্ত্রণালয় করে না। সেটা দেশের পার্লামেন্টে পাস করে একটা নীতিমালা করা হয়। খুবই বিশদভাবে এটা করা হয়।” তিনি আরও যোগ করেন, “কাজেই সে ধরনের কোনো জাতীয় কৌশল-নীতি আমাদের কাছে নাই। ফলে এটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে- একটি মন্ত্রণালয়ের ধারণা থেকে এটা আসছে, কাজেই কোনো জাতীয় নীতিমালা আছে বলে আমি মনে করি না। এ ধরনের কার্যক্রম জাতীয় নীতিমালা ছাড়া করা যায় না। কারণ এর সঙ্গে স্পর্শকাতর জিনিসপত্র জড়িত থাকে, জাতীয় নিরাপত্তা জড়িত থাকে এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ভালো হতে পারে বা খারাপও হতে পারে।” জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং রাষ্ট্রীয় অর্থের অপব্যবহারের এই অভিযোগ ওঠায়, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগেই গোটা বিষয়টি জাতীয় বিতর্কের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।