অক্টোবরে হেফাজতে মৃত্যু ও অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার বৃদ্ধি, মানবাধিকার পরিস্থিতি ‘উদ্বেগজনক’

১ নভেম্বর, ২০২৫ | ৪:২৬ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতিকে আরও ‘উদ্বেগজনক ও অস্থির’ করে তুলেছে। আজ শুক্রবার মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) প্রকাশিত অক্টোবর মাসের প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবরে দেশে ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, যা গত সেপ্টেম্বরে ছিল ৫২টি। একই সাথে কারা হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে প্রায় ৬২ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে যেখানে আটজন বন্দীর মৃত্যু হয়েছিল, সেখানে অক্টোবরে ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু নথিভুক্ত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ছয়জন কয়েদি এবং সাতজন হাজতি ছিলেন। এমএসএফের মতে, নারী ও শিশু নির্যাতন, রাজনৈতিক সহিংসতা, সীমান্তে হত্যাকাণ্ড এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি এখনো চরম অবনতির দিকে রয়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতা ও নারী নির্যাতন বৃদ্ধি প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা এবং তাতে হতাহতের সংখ্যা উভয়ই অক্টোবরে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেপ্টেম্বরে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনায় হতাহত হয়েছিল ২৯৬ জন। অক্টোবরে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪৯ জন। এদিকে, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনাও বেড়েছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে মোট ৩৬৮টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, যা গত মাসের চেয়ে সাতটি বেশি। এর মধ্যে ৭২টি ধর্ষণের অভিযোগ, ১৪টি দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ এবং ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগের ঘটনা ঘটেছে ৭টি। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, এই মাসে ৫ জন প্রতিবন্ধী কিশোরী ও নারী ধর্ষণের অভিযোগ তোলেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন কারা হেফাজতে মৃত্যু ও অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধিকে মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। সাইদুর রহমান বলেন, “কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।” তিনি আরও বলেন, “পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী শুধু এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্‌ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।” অক্টোবরের এই পরিসংখ্যান ইঙ্গিত দেয় যে, আইন-শৃঙ্খলা ও মানবাধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।