আইএমএফ: দুর্বল ব্যাংকগুলোকে অঙ্গীকারনামার ঋণ দিলে আর্থিক খাতে ঝুঁকি বাড়বে

৩০ অক্টোবর, ২০২৫ | ৫:৪৬ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

দুর্বল ব্যাংকগুলোর কাছে ‘ডিমান্ড প্রমিসরি নোট’ বা অঙ্গীকারনামার বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি মনে করে, এ ধরনের ঋণনীতি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং আর্থিক খাতে ঝুঁকি বাড়াতে পারে। বর্তমানে কোনো সিকিউরিটিজ ছাড়াই শুধুমাত্র অঙ্গীকারনামার বিপরীতে দুর্বল ব্যাংকগুলোর কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির আওতায় ষষ্ঠ কিস্তি ছাড়ের আগে শর্তপূরণের অগ্রগতি পর্যালোচনার অংশ হিসেবে সংস্থাটির প্রতিনিধি দল বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছে। বুধবার তারা অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ও নির্বাহী পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফ প্রতিনিধি দল বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে, তবে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সরকারি সিকিউরিটিজের পরিবর্তে কেবল অঙ্গীকারনামার বিপরীতে ঋণ দেওয়া নিয়মবহির্ভূত। এতে বাজারে টাকার সরবরাহ বেড়ে মুদ্রাস্ফীতির চাপ তৈরি হতে পারে। পাশাপাশি এসব ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে অনিশ্চয়তা থেকে যায়। আইএমএফের প্রতিনিধি দল এবার শুধু ঋণ কর্মসূচির শর্ত বাস্তবায়নই নয়, বরং সংস্থাটির আর্টিকেল ফোর পর্যালোচনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা মূল্যায়ন করছে। দুই সপ্তাহব্যাপী এই সফরে দলটি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করে অর্থনৈতিক তথ্য সংগ্রহ ও নীতিগত আলোচনায় অংশ নেবে। সফর শেষে তারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও টেকসই উন্নয়ন নিয়ে একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। আইএমএফের গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রো ইকোনমিকস শাখার প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও এই মিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সফরের প্রথম দিনেই প্রতিনিধি দল অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারের সঙ্গে বৈঠক করে সফরের উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা তুলে ধরে। এ ছাড়া তারা অর্থ বিভাগের সামষ্টিক অর্থনীতি ও বাজেট শাখার সঙ্গেও বৈঠক করে। সেখানে কর রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি, উন্নয়ন ব্যয়ে লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থতা এবং ভর্তুকি কমানোসহ বিভিন্ন আর্থিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হয়। অর্থ বিভাগের দাবি, রাজনৈতিক পরিবর্তন ও প্রকল্প সংশোধনের কারণে উন্নয়ন ব্যয় কমেছে, তবে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। উল্লেখ্য, আইএমএফের আর্টিকেল ফোর অনুযায়ী, সদস্য দেশগুলোর অর্থনৈতিক নীতি ও অবস্থার নিয়মিত মূল্যায়ন করা হয়। সর্বশেষ ২০২৩ সালে বাংলাদেশের ওপর এ ধরনের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল আইএমএফ, যা অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সিদ্ধান্ত গ্রহণেও প্রভাব ফেলেছিল।