পিবিডিএফ-এ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সিন্ডিকেটের রমরমা নিয়োগ বাণিজ্য: শিবির-এনসিপির ২৩৮৮ জনের পদায়ন

৩০ অক্টোবর, ২০২৫ | ৫:৪১ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীন পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিবিডিএফ) নিয়োগে নিয়ে ঘটেছে অভাবনীয় দুর্নীতি ও অনিয়ম। অতি গোপনীয়তা ও দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাত্র ৫ মাসের মধ্যেই ২৩৮৮ জনকে ১ম ও ২য় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্তদের বেশিরভাগই গুপ্ত সংগঠন ছাত্রশিবির এবং ড. ইউনূসের কিংসপার্টি খ্যাত এনসিপির বিশেষ সুপারিশপ্রাপ্ত। এছাড়াও রয়েছে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ঘনিষ্ঠজনেরা, যারা বড় অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ পেয়েছেন বলে জানিয়েছে সূত্র। এ বছরের ২৪শে মার্চ পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনে (পিবিডিএফ) ১৬৬৫ জন নিয়োগের দুটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১ম শ্রেণীর ৯ম গ্রেডের দারিদ্র্য বিমোচন কর্মকর্তা পদে ১৫৫ জন, ২য় শ্রেণীর ১১তম গ্রেডের সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পদে ৩৩৫ জন ও ১২তম গ্রেডের মাঠ কর্মকর্তা পদে ১১৭৫ জন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে আবেদন আহ্বান করা হয়। আবেদনের শেষ তারিখ ছিল ১৪ই এপ্রিল, ২০২৫। অত্যন্ত গোপনীয়তার মধ্যে ও অতিদ্রুত এই নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করার নিমিত্তে পিবিডিএফ ২৬শে এপ্রিল ৩টি পদে ২ ঘন্টার লিখিত পরীক্ষা নেয় এবং ১৩ই মে তারিখে ফলাফল দেয়। ২৩শে এপ্রিল সংস্থার ওয়েবসাইটে ২৬শে এপ্রিল পরীক্ষা নেওয়া হবে মর্মে বার্তা দেওয়া হলেও মোট কতজন নিয়োগ আবেদন করেছে বা মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ও পরীক্ষা কেন্দ্র বিষয়ক কোনো তথ্য ছিল না সেখানে। এছাড়া সরকারি কর্মচারী নিয়োগ বিধি অনুযায়ী ১ম ও ২য় শ্রেণীর নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার বিধান থাকলেও এক্ষেত্রে কোনো প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। শুধু ২ ঘন্টার লিখিত পরীক্ষা ও মাত্র ৮ দিনে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৬ হাজার ৮০৬ জন মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে তড়িঘড়ি করে এই নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। পিবিডিএফ কর্তৃপক্ষ ৩১শে আগস্ট চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করে ৪ঠা সেপ্টেম্বর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অডিটরিয়ামে যোগদানপত্র দেয়া হয়েছে। তড়িঘড়ি করে নিয়োগপ্রাপ্তদের উপজেলায় পদায়ন করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যে। শেকৃবি অডিটরিয়ামে যোগদানপত্র দেওয়ার অনুষ্ঠানের কথা কোনো গণমাধ্যমেও আসেনি। যা এই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরো প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এই প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগের নাটের গুরু স্বয়ং উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তার সাথে রয়েছেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব ইসমাইল হোসেন এবং পিবিডিএফের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক যুগ্ম সচিব মো. মাহমুদ হাসানের সিন্ডিকেট। অভিযোগ রয়েছে, গুপ্ত সংগঠন ছাত্রশিবির ও এনসিপি নেতৃবৃন্দের সুপারিশপ্রাপ্তরা ছাড়াও নিয়োগপ্রাপ্তদের বড় অংশ এই সিন্ডিকেটকে ১২ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে চাকরি বাগিয়ে নিয়েছেন। একটি সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন পদ অনুযায়ী ঘুষের দর উঠেছে নিম্নরূপ: দারিদ্র্য বিমোচন কর্মকর্তা পদের জন্য ২০-২৫ লাখ, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার পদে ১৫-১৮ লাখ এবং মাঠ কর্মকর্তা পদের জন্য ১২ লাখ টাকা। মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার জানালেন, ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে ১৬৬৫ জনের নিয়োগের পরেও খায়েশ মেটেনি আসিফ মাহমুদসহ তার সাঙ্গপাঙ্গদের। ২৩শে অক্টোবর একই ফলাফলের ভিত্তিতে প্যানেল থেকে পুনরায় ৫৬ জন দারিদ্র্য বিমোচন কর্মকর্তা, ১২৪ জন সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ও ৫৪৩ জন মাঠ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যার ফলে বিজ্ঞপ্তিতে ১৬৬৫ জন নিয়োগের কথা বলা হলেও চাকরিপ্রাপ্তের সংখ্যা বেড়ে ২৩৮৮ জনে দাঁড়িয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সরকারি চাকরির নিয়োগে এমন অনিয়ম আগে হয়েছে কিনা জানা নেই, আক্ষেপ জানান তিনি। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত ১৬৬৫ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়া, আবেদনকারী সংখ্যা ও পরীক্ষার ব্যাপ্তি বিবেচনায় এই নিয়োগে অন্তত ১২ মাস সময় লাগার কথা। এমনকি সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)র এত সক্ষমতা থাকলেও তাদের পক্ষেও এত দ্রুত এত প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। সেখানে প্রয়োজনীয় জনবলহীন পিবিডিএফ কীভাবে এত দ্রুত এত বড় নিয়োগ সম্পন্ন করল, তা নিয়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের মনে প্রশ্ন ও সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে। দেশের শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করা চাকরিপ্রত্যাশীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের বেশিরভাগ এই নিয়োগ সম্পর্ক জানেন না কিংবা ঘনিষ্ঠসূত্রে অল্পবিস্তর জেনেছেন। এছাড়া মাত্র ৫ মাসে ২৩৮৮ জনের নিয়োগ সম্পন্নের বিষয়টি শুনেও অনেকে অবাক হয়েছেন। তারা এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির বিষয়ে যথাযথ তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেন।