পশ্চিমা মিডিয়ার পাল্টি: ভয় নাকি রণনীতি? শুরু হল কি ‘অপারেশন র‍্যেথ অফ বেঙ্গল’? আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক এবিএম সিরাজুল হোসেনের বিস্ফোরক দাবি

৩০ অক্টোবর, ২০২৫ | ৫:৩০ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

সম্প্রতি প্রভাবশালী পশ্চিমা মিডিয়াগুলোতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থনে একযোগে যে সাহসী বক্তব্য এবং অনুকূল বিশ্লেষণ প্রকাশ করা হয়েছে, তা দেশের ভূ-রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যে পশ্চিমা মিডিয়া গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে শেখ হাসিনার সরকার উৎখাতে সক্রিয় ছিল বলে অভিযোগ, তাদের এই আকস্মিক সুর পরিবর্তনের পেছনে কারণ কী? সমাজতত্ত্ববিদ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক এবিএম সিরাজুল হোসেন তাঁর এক বিস্ফোরক বিশ্লেষণে দাবি করেছেন যে, এই অস্বাভাবিক অনুকূল প্রচারণার মূল কারণ হলো পশ্চিমা 'ডিপ স্টেট' অপারেটরদের "ভয়"। তাঁর মতে, বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সম্ভবত এক অভূতপূর্ব, কঠোর নিরাপত্তা অপারেশন শুরু হয়েছে—যা তিনি নাম দিয়েছেন ‘অপারেশন র‍্যেথ অফ বেঙ্গল’ (Operation Wrath of Bengal)। পশ্চিমা মিডিয়ার হঠাৎ ইউ-টার্ন: সিআইএ’র ভয় বিশ্লেষক এবিএম সিরাজুল হোসেন প্রশ্ন তুলেছেন যে, সিআইএ বা অন্য কোনো ডিপ স্টেট অপারেটরদের প্রভাব ছাড়া প্রভাবশালী পশ্চিমা মিডিয়াগুলো এইভাবে একই সময়ে কোনো নির্দিষ্ট অনুকূল ন্যারেটিভ প্রকাশ করে না। হোসেনের দাবি, "যে পশ্চিমা মিডিয়া শেখ হাসিনাকে হত্যা ও তার দলকে নিঃশেষ করতে গত ২৫ বছর ধরে আপ্রাণ চেষ্টা করছে, তারা পাল্টি খেল কেন? এর এক কথায় উত্তর হল, 'তারা ভয় পেয়েছে'।" তাঁর মতে, শত্রুরা এমন কিছুর মুখে পড়েছে, যা তাদের দীর্ঘদিনের 'রেজিম চেঞ্জ' কৌশলকে সম্পূর্ণ ব্যর্থ করে দিয়েছে। ঢাকার দুই হোটেলে রহস্যজনক মৃত্যু: অপারেশনের ইঙ্গিত? সিরাজুল হোসেন তাঁর বিশ্লেষণের কেন্দ্রে এনেছেন ঢাকার দুটি পাঁচতারা হোটেলে বিদেশি গোয়েন্দা অপারেটিভদের মৃত্যুর ঘটনাকে। ৩১ আগস্ট ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে ফার্স্ট স্পেশাল ফোর্সেস কমান্ড (এয়ারবর্ন)-এর কমান্ড ইন্সপেক্টর জেনারেল টেরেন্স আরভেল জ্যাকসনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়, যিনি একজন গ্রিন বেরেটস অফিসার ছিলেন এবং ২৫ বছরব্যাপী বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধ বাধানোর প্রজেক্টের সাথে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ। এরপর ঢাকা শেরাটন হোটেলে এক পাকিস্তানি সেনা গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই (ISI)-এর এজেন্টের মৃত্যুর খবর শোনা যায়। সিরাজুল হোসেনের মতে, এই দুজন গুরুত্বপূর্ণ পাক-মার্কিন গোয়েন্দা অপারেটিভকে "নিউট্রালাইজড" করার খবর ইঙ্গিত দেয় যে, দেশের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান প্রচলিত গণতান্ত্রিক পদ্ধতির বাইরে গিয়ে সরাসরি এবং কঠোর অ্যাকশনে নেমেছে। প্রতিশোধের নতুন আদর্শ: মুজিব নাকি মেয়ার? আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক এবিএম সিরাজুল হোসেন তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন যে, ১৯৭৫ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এই ৫০ বছর ধরে পাক-মার্কিন দালালরা ধর্মের নামে ও গণতন্ত্রের নামে যে শয়তানী খেলা শুরু করেছে, ২০২৪ সালের পরিকল্পিত দাঙ্গায় তা সকল মানবিক সীমানা অতিক্রম করেছে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭২ সালের ক্ষমা ও প্রতিহিংসাহীন নীতির কথা: “আমি প্রতিশোধ চাই না। আমি ন্যায়বিচার চাই... কিন্তু আমরা প্রতিশোধের রাজনীতি করব না।” এর বিপরীতে, তিনি ১৯৭২ সালের মিউনিখ গণহত্যার পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেয়ারের কঠোর প্রতিশোধের নীতি তুলে ধরেন, যা মোসাদের ‘অপারেশন র‍্যেথ অফ গড’-এর জন্ম দিয়েছিল: "আমরা কখনো ভুলব না। আমরা কখনো ক্ষমা করব না। আমরা কখনো থামব না। যারা আমাদের সন্তানদের হত্যা করেছে, তাদের প্রতিটি শ্বাস আমরা শেষ করে দেব। এটা প্রতিশোধ নয় – এটা ন্যায়বিচার।" হোসেনের উপসংহার হলো, বারবার আঘাতপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ সরকার এখন মেয়ারের পথে হেঁটেছে। চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি: র‍্যেথ অফ বেঙ্গল কি শুরু? এবিএম সিরাজুল হোসেন তাঁর লেখায় উপসংহার টেনেছেন এই হুঁশিয়ারি দিয়ে: "তারা কি জানে সরল মানুষেরা হাতে তুলে নেয় তাদেরই অস্ত্র তখন পরিণতি কি হয়? বাংলাদেশে কি শুরু হবে না অপারেশন র‍্যেথ অফ গড? ২৪ এর সকল শয়তানের শিষ্যকে খুঁজে খুঁজে বের করা হবে না কি? তারা দুনিয়ার যে প্রান্তেই পালাক না কেন? অপারেশন র‍্যেথ অফ বেঙ্গল কি শুরু হয়ে গেল তবে? তার ভয়েই কি শেখ হাসিনার পক্ষে পশ্চিমের পাল্টি?"