ভারতের সাথে আন্তঃদেশীয় রেলসেবা পুনরায় চালু করতে উদগ্রীব ‘দিল্লির দাসত্ব’ বিরোধী ইউনূস সরকার
ভারতের সঙ্গে আন্তঃদেশীয় রেল যোগাযোগের বিরোধিতা কাজে লাগিয়ে যে ভারত-বিরোধী মনোভাব গড়ে উঠেছিল বাংলাদেশে, তারই প্রেক্ষাপট ব্যবহার করে গত বছর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানো হয়। এই পরিস্থিতিতে ১৯শে জুলাই থেকে বন্ধ থাকা আন্তঃদেশীয় ট্রেন যোগাযোগ পুনরায় চালুর জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বারবার ভারতের কাছে আবেদন জানাচ্ছে। বাংলাদেশ রেল মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, রেল সচিব সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভারতকে পুনরায় চিঠি পাঠাবেন, যাতে দুই দেশের মধ্যে যাত্রী ও মালবাহী ট্রেনের চলাচল পুনরায় শুরু হয়। রেল সচিব বলেন, “আন্তঃদেশীয় রেল চালু করতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভারতকে ফের চিঠি দেবো। আমাদের দিক থেকে আগ্রহের কমতি যে নেই, সেটা আমরা প্রমাণ করতে চাই।” বাংলাদেশ রেলওয়েের কর্মকর্তারা জানান, পূর্ববর্তী চিঠিপত্রের পর ভারতের রেলওয়ে বোর্ডের পক্ষ থেকে অনুমতি না মিললেও বাংলাদেশ পক্ষ একাধিকবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে মৈত্রী এক্সপ্রেস, বন্ধন এক্সপ্রেস এবং মিতালী এক্সপ্রেসের মতো যাত্রী ট্রেনসহ মালবাহী সার্ভিস পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাইতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু বিক্ষোভ ছড়িয়ে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়। এর ফলে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে ১৯শে জুলাই থেকে সকল আন্তঃদেশীয় ট্রেন সার্ভিস অস্থায়ীভাবে বন্ধ হয়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয় এবং ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ এই সেবাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখে। দাঙ্গাবাজরা ভারতের সঙ্গে রেল যোগাযোগকে ‘ভারতপন্থী’ শেখ হাসিনা সরকারের সুবিধার জন্য ব্যবহৃত বলে অপপ্রচার চালায়, যা ভারতবিরোধী মনোভাবকে উস্কে দেয়। সারা দেশে ভারত বিরোধী মনোভাব উস্কে দিতে বিক্ষোভকারীরা “দিল্লী না ঢাকা?” স্লোগানে মুখরিত করে রাখে রাজপথ। বাংলাদেশের সাথে ভারতের বন্ধুত্বপ্রতীম সম্পর্ককে “দিল্লির দাসত্ব” আখ্যা দিয়ে ভারতের সাথে সকল চুক্তি বাতিলের দাবি ওঠে। দাবির মাত্রা এতোই প্রবল ছিল যে, ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ গোঁজামিল দিয়ে তার অনুসারীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন যে তারা ভারতের সাথে দশটিরও বেশি চুক্তি বাতিল করেছে। যা আদতে ছিল মিথ্যা ও অসম্পূর্ণ তথ্যে ভরপুর। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা পরে সেই চুক্তি বাতিলের তথ্যকে মিথা ও মনগড়া বলে বক্তব্য দেন। অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে ড. ইউনূস এখন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু হলে বাণিজ্য, পর্যটন এবং মানুষের যাতায়াতে সুবিধা বাড়বে বলে বিশ্বাস করা হয়। তবে ভারতের পক্ষে এখনও নিরাপত্তা ও পরিস্থিতির মূল্যায়নের কথা উল্লেখ করে অনুমতি দিতে দ্বিধাগ্রস্ত। বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন, দ্রুত সমাধানের মাধ্যমে এই যোগাযোগ পুনরুদ্ধার সম্ভব।দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এই উন্নয়ন অস্থিরতার পর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সক্রিয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা অর্থনৈতিক সহযোগিতার পথ খুলতে পারে।
