ড. ইউনূসের ম্যাজিকেল আমলে বন্ধ হয়েছে ২৫৮টি তৈরি পোশাক কারখানা, কর্মহীন লাখো শ্রমিক

২৯ অক্টোবর, ২০২৫ | ৫:২৪ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

ম্যাজিশিয়ান তকমা পাওয়া ড. ইউনূসের ম্যাজিকেল আমলে দেশের রপ্তানিমুখী পোশাক খাত এক ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। ডলার সংকট, বৈদেশিক বাজারের অনিশ্চয়তা, জ্বালানি ঘাটতি এবং প্রশাসনিক স্থবিরতার কারণে গত চার মাসে ২৫৮টি পোশাক কারখানা উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। সেই সাথে বেকার হয়েছেন লাখো শ্রমিক। শিল্প উদ্যোক্তা, শ্রমিক সংগঠন ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন—সরকারের অদক্ষতা, নীতিগত অস্থিরতা ও দুর্বল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এই পরিস্থিতির জন্য মূলত দায়ী। বাংলাদেশ গার্মেন্টস প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) জানায়, কারখানা বন্ধের এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছরের শেষে বন্ধ কারখানার সংখ্যা ৪০০ ছাড়াতে পারে। সংগঠনটির সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করায় কিছুটা স্বস্তি এলেও সামগ্রিক পরিস্থিতি এখনো উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, “আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে এখন শুল্কহার প্রায় সমান বা কোথাও কোথাও কিছুটা কম। এটি ইতিবাচক হলেও যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের ওপর নতুন শুল্কভার চাপিয়ে দেওয়ায় অর্ডার কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে রপ্তানি আয় ও কর্মসংস্থান দুই দিকেই ধাক্কা লাগবে।” বিজিএমইএর এক সাবেক পরিচালক ফারুক হাসান চৌধুরী বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে প্রশাসনিক তৎপরতা মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, ব্যাংকগুলো এলসি খুলছে না, জ্বালানি সরবরাহে ঘাটতি ক্রমেই বাড়ছে—এসব মিলিয়ে শিল্প খাত প্রায় স্থবির অবস্থায়।” তিনি আরও বলেন, “সরকার ব্যবসায়বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। একদিকে কাঁচামালের দাম বেড়ে গেছে, অন্যদিকে ক্রেতারা দাম কমাতে চাপ দিচ্ছেন। ফলে উদ্যোক্তারা কারখানা টিকিয়ে রাখতে পারছেন না।” শিল্পাঞ্চল আশুলিয়া ও গাজীপুর এলাকায় বন্ধ হয়ে যাওয়া একাধিক কারখানার শ্রমিকরা এখন কর্মহীন। গাজীপুরের টঙ্গীর এক শ্রমিক রুবিনা আক্তার বলেন, “আমাদের কারখানায় ৮০০ জন কাজ করত। এক মাস আগে মালিক বললেন, ‘বিদ্যুৎ বিল, ব্যাংকের সুদ আর ডলারের চাপ সামলানো যাচ্ছে না’। এরপর হঠাৎ করেই বন্ধ। এখন আমরা বেকার।” শ্রমিক নেত্রী শারমিন আক্তার বলেন, “শ্রমিকেরা মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছে না। অনেকে বাড়ি ফিরেছেন। অথচ সরকার থেকে কোনো স্পষ্ট নীতি বা সহযোগিতা আসছে না।” অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থনৈতিক পরিচালনা দুর্বল ও অসংগঠিত। তিনি বলেন, “যে সময়ে রপ্তানি খাতের জন্য নীতি সহায়তা বাড়ানো প্রয়োজন ছিল, সরকার তখন রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সামলাতে ব্যস্ত। এতে রপ্তানিমুখী শিল্পে আস্থা নষ্ট হচ্ছে, বিদেশি ক্রেতারাও নতুন অর্ডার দিতে দ্বিধাগ্রস্ত হচ্ছেন।” তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে নতুন শুল্কহার কিছুটা স্বস্তি আনলেও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপ, জ্বালানি ঘাটতি এবং সরকারি নীতির অদক্ষতা মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে।” এর আগে হোয়াইট হাউজের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার স্বাক্ষরিত নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে একাধিক দেশের ওপর নতুন করে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন। এতে বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ, ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ, পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর ৩০ শতাংশ, আর মিয়ানমারের ওপর সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, যদিও বাংলাদেশ এখন প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় শুল্কহারে তেমন পিছিয়ে নেই, তবুও স্থানীয় বাজারে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক অর্ডার ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, “আমরা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করব। তবে সরকারের সহায়তা ছাড়া একা কোনো শিল্পই টিকে থাকতে পারবে না। ব্যাংক সুদহার, এলসি জটিলতা ও জ্বালানি ঘাটতি না কমলে আরও অনেক কারখানা বন্ধ হতে পারে।” এদিকে পোশাক খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় নীতি-অস্পষ্টতা এবং সিদ্ধান্তহীনতা শিল্পের সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারখানা বন্ধের এই ধারা চলতে থাকলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও কর্মসংস্থানে ভয়াবহ প্রভাব পড়বে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।