জুলাই সনদকে সংবিধানে ‘অটোপাস’ করার প্রস্তাব: আলী রিয়াজের ২৭০ দিনের বাধ্যবাধকতার বিরোধীতা বিএনপি’র

২৯ অক্টোবর, ২০২৫ | ৬:২৬ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে জুলাই সনদকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়ায় ‘স্বয়ংক্রিয়’ বা ‘অটোপাস’ বিধান যুক্ত করা হয়েছে, যা রাজনৈতিক বৃত্তে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজের নেতৃত্বাধীন এই সুপারিশে বলা হয়েছে, পরবর্তী সংসদ নির্বাচিত সংস্কার পরিষদকে প্রথম অধিবেশন থেকে ২৭০ দিনের মধ্যে জুলাই সনদ অনুসারে সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। এই সময়সীমায় কাজ না হলে প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে। এই সুপারিশ মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। আলী রিয়াজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জুলাই সনদ অনুসারেই সংবিধান সংস্কার হতে হবে, এবং গণভোটের মাধ্যমে জনমত গঠনের প্রস্তাবও রয়েছে। তবে এই ‘২৭০ দিনের বাধ্যবাধকতা’কে জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন বিরোধীরা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এটাকে ‘অটোপাসের মতো হাস্যকর’ বলে উল্লেখ করে বলেছেন, “পরীক্ষায় অটোপাসের মতো বিষয় সংবিধানে থাকতে পারে না।” তিনি আরও যুক্তি দেন, কমিশন নিজেদের ‘নিষ্কৃতি’ পেয়ে যাওয়ার জন্য এমন সুপারিশ করেছে, যাতে নির্বাচনোত্তর সরকারের হাত বাঁধা পড়ে। জুলাই সনদ, যা ২০২৫ সালের ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ঘোষিত হয়েছে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংস্কারের রূপরেখা নির্ধারণ করে। এতে রাজনৈতিক ঐকমত্যভিত্তিক প্রস্তাব রয়েছে, কিন্তু বিএনপির মতো জুলাই আন্দোলনের স্টেকহোল্ডাররা এর বাস্তবায়নে গণভোটের উপর জোর দিয়েছেন। সালাহউদ্দিনের মতে, সনদের বহির্ভূত অনেক বিষয় যুক্ত করে কমিশন ঐক্যের পরিবর্তে ‘অনৈক্য’ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই প্রস্তাব নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে হাস্যরসের ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, “২৭০ দিনে অটো যোগ হলে গণতন্ত্র কোথায়?” অনেকে এটাকে ‘অটো সংবিধান’ বলে আখ্যায়িত করছেন, যা সংস্কার প্রক্রিয়াকে হাস্যকর করে তুলেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচনোত্তর সরকার গঠিত হলে সংস্কারের তাত্ত্বিক আলোচনা বাস্তবে রূপ নেবে না—এই ভয় থেকেই কমিশন এমন জোরপূর্বক ব্যবস্থা নিতে চাইছে। গত ১৪ মাস ধরে সংবিধান সংস্কার, বাতিল এবং জুলাই সনদ নিয়ে চলা আলোচনা-আলোচনা এখন একাকার হয়ে গেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে এই হুল্লোড় সত্ত্বেও বাস্তবায়নের কোনো সুনির্দিষ্ট পথ দেখা যায়নি, যা রাজনৈতিক অস্থিরতাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। বিএনপির মতো দল এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ না করে গণভোটের মাধ্যমে জনমতের উপর নির্ভর করতে চাইছে, যাতে সংস্কারগুলো জনগণের সম্মতিতে হয়।