অর্থনীতিতে বহুমুখী চাপ: ব্যয়ের লাগাম টানতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার
কৃচ্ছতা সাধনের ঘোষণা দিলেও সরকারি ব্যয়ে লাগাম টানতে পারছে না সরকার। ফলে বাড়ছে আর্থিক চাপ। ২০২৫–২৬ অর্থবছরের শুরুতেই ব্যয় সংকোচনের নির্দেশনা দেওয়া হলেও বাস্তবে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস ওঠেছে। থমকে আছে ব্যবসা বাণিজ্য। একদিকে ভর্তুকি বাড়ছে, অন্যদিকে সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা, নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এবং ঋণ পরিশোধের বাড়তি চাপ সরকারের ওপর আর্থিক ভার বাড়িয়ে তুলেছে। অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ হতে যাচ্ছে। রাজস্ব আদায়ে কিছুটা অগ্রগতি হলেও তা মোট চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট নয়। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রশিক্ষণ, নির্বাচনি সরঞ্জাম কেনা, এবং নিরাপত্তা ব্যয়ের জন্যও অতিরিক্ত বরাদ্দ দিতে হচ্ছে। সরকারি ব্যয় নিয়ন্ত্রণে আনতে বাজেট সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মার্চের পরিবর্তে এবার ডিসেম্বরেই বাজেট সংশোধন করার প্রস্তুতি চলছে। বর্তমান বাজেটে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও ভাতা বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ৮৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। কিন্তু বিশেষ আর্থিক সুবিধা দেওয়ায় এই খাতে ব্যয় আরও বাড়তে পারে। জুলাই থেকে গ্রেড–১ থেকে ৯ পর্যন্ত কর্মচারীদের মূল বেতনে ১০ শতাংশ এবং গ্রেড–১০ থেকে ২০ পর্যন্ত ১৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। একই সময়ে পুলিশ সদস্যদের ঝুঁকি ভাতা ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে, যা অতিরিক্ত ১০০ কোটি টাকার ব্যয় বাড়াবে। এ ছাড়া ১ হাজার ৫১৯টি মাদরাসা নতুন করে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছেন। জাতীয়করণের দাবিতেও আন্দোলন চলছে। এতে শিক্ষা খাতেও বাড়ছে আর্থিক চাপ। বিদেশি মিশনে কর্মরত কর্মকর্তাদের বৈদেশিক ভাতা ২০ থেকে ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে এবং সরকারি কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ভাতা দ্বিগুণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতের বকেয়া ভর্তুকি বাবদ ৬২ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করায় চাপ আরও বেড়েছে। অর্থ বিভাগ জানায়, ব্যয়ের অগ্রাধিকার নির্ধারণ ও সাশ্রয়যোগ্য খাত চিহ্নিত করতে কাজ চলছে। উন্নয়ন বাজেটও আরও কমানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে ডিসেম্বরেই বাজেট সংশোধন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। ভর্তুকি ও অতিরিক্ত সুবিধার কারণে ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে নির্বাচন সামনে, তাই অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন আরও বেড়েছে।
