আদর্শের টানে পরিবার ছাড়লেন মুবিন

২৯ অক্টোবর, ২০২৫ | ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চরম দমন-পীড়নের মুখে যখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কঠিন সময় পার করছেন, ঠিক তখনই এক ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অ্যাডভোকেট ফয়জুল করিম মুবিন। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সরকারের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর পুত্র মুবিন তার দীর্ঘদিনের পারিবারিক ঐতিহ্য ও বিএনপির রাজনৈতিক বলয় ছিন্ন করে গত ২২ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। ক্ষমতার মোহমুক্ত হয়ে, চরম প্রতিকূলতার মুহূর্তে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিতে যোগদানের এই সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা দেখছেন আদর্শের প্রতি তার অবিচল নিষ্ঠার প্রতীক হিসেবে। মুবিনের এই সাহসী পদক্ষেপ আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন প্রেরণা সৃষ্টি করেছে। শেখ হাসিনাই ‘একমাত্র আশ্রয়স্থল’: আদর্শিক উত্তরণ অ্যাডভোকেট ফয়জুল করিম মুবিন জানিয়েছেন, তার এই দলবদল কোনো রাজনৈতিক সুবিধা লাভের উদ্দেশ্যে নয়, বরং এটি তার আদর্শগত পরিবর্তনের ফল। বর্তমান কঠিন পরিস্থিতিতেও তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি তার গভীর আস্থাকে সামনে এনেছেন। মুবিন ঘোষণা করেন, এই কঠিন সময়েও তিনি শেখ হাসিনাকে ‘প্রকৃত দেশপ্রেমিক এবং বাংলাদেশের মানুষের একমাত্র আশ্রয়স্থল’ হিসেবে গণ্য করেন। তাঁর যোগদানের মূল প্রেরণা: মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পুনরুজ্জীবন: মুবিন দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়েছেন, তিনি এখন ‘মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি ও ধর্মনিরপেক্ষ দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব’ ধারণ করতে চান। তার লক্ষ্য, দলীয় আনুগত্যের ঊর্ধ্বে উঠে বাংলাদেশের মূল আদর্শ রক্ষা করা। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে রুখে দেওয়া: তার এই সাহসী পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এবং যারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ ভোগ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আদর্শিক সংগ্রামে নিজেকে উৎসর্গ করা। মুবিন গত ৫ অক্টোবর ফেসবুকে বিএনপির সকল পদ ত্যাগ করে তার আদর্শিক পরিবর্তনের পথ উন্মোচন করেন। অ্যাডভোকেট মুবিনের এই সিদ্ধান্ত তাকে তার পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে দূরে সরিয়ে দিলেও, তিনি তার আদর্শের প্রতি দৃঢ় থাকতে এই ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তার বাবা শহীদ জিয়ার মন্ত্রিসভার সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. ফজলুল করিমের আদর্শ (বহুদলীয় গণতন্ত্র) ধারণ করা পরিবার মুবিনের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেনি। ২৮ অক্টোবর তার যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বড় ভাই মোবাস্বারুল করিম আনুষ্ঠানিকভাবে জানান, এটি মুবিনের ‘একান্তই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত’ এবং পরিবার তা সমর্থন করে না। পরিবারের এই আপত্তি সত্ত্বেও মুবিন তার নতুন আদর্শের প্রতি অবিচল থাকেন। পরিবারের বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইনজীবী ফয়জুল করিম মুবিন তার প্রত্যয়ী জবাব দেন, “স্ত্রী-সন্তান ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আমার পরিবার। আমি তাদের (পরিবার) সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই।” এই বক্তব্য তার আদর্শিক প্রতিশ্রুতির গভীরতাকে প্রমাণ করে। যখন আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে কঠিন সময়ের মুখোমুখি, তখন সাবেক প্রতিমন্ত্রীর পুত্রের এই যোগদান শুধু একটি দলবদল নয়, বরং নীতি ও সাহসের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই আদর্শিক পরিবর্তনের কারণে তাকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকে বহিষ্কার করা হলেও, মুবিন তার নতুন পথ থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হননি।