অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মদদে বাংলাদেশে ভয়াবহভাবে বাড়ছে সন্ত্রাসবাদ
শত শত জঙ্গিকে মুক্তি ও জামিন, সিটি ইউনিটের কার্যকারিতা বিনষ্টের অভিযোগ—নিরাপত্তা নিয়ে চরম উদ্বেগ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, ড. ইউনূসের নেতৃত্বে পরিচালিত হওয়ার পর, বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের উত্থানকে সরাসরি সমর্থন ও উৎসাহিত করছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের এই ভূমিকা দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে চরম অস্থিতিশীল করে তুলেছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা সক্রিয়ভাবে উগ্রপন্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, কারাবন্দী জঙ্গিদের মুক্তি দিয়েছেন এবং প্রাক্তন সন্ত্রাস দমন (সিটি) ইউনিটের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে উৎসাহ যুগিয়েছেন। জঙ্গি মুক্তি ও পৃষ্ঠপোষকতা ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকার নির্দিষ্ট উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলির প্রতি পরোক্ষ সমর্থন দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ। এর প্রমাণস্বরূপ, নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্রবাদী সংগঠন ‘হিযবুত তাহরীর’ প্রকাশ্যে ঢাকায় বিশাল মিছিল করে বাংলাদেশে 'ইসলামিক খেলাফত' প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে। সরকারের এমন নীরবতা উগ্রবাদের প্রসারে সহায়তা করছে। সরকারি সহায়তায় হাজার হাজার কারাবন্দী, যাদের মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরাও রয়েছে, কারাগার থেকে পালিয়ে গেছে। এদের মধ্যে ৭৮ জন চিহ্নিত জঙ্গি ছিল। এছাড়া, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম ও এনসিপি-এর মতো সহযোগী দলগুলোর সরাসরি সমর্থনে প্রায় ২১০ জন সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি জামিন পেয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটিটিসি-এর একজন প্রাক্তন কর্মকর্তা, যাকে সরকার অব্যাহতি দিয়েছে, দাবি করেছেন যে এই মুক্ত পাওয়া জঙ্গিরাই মূলত জুলাই আন্দোলনে ছাত্র ও সাধারণ মানুষকে হত্যার মূল হোতা ছিল। তিনি আরও অভিযোগ করেন, ছাত্র নেতারা এবং ড. ইউনূস এই জঙ্গিদের মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন। বিভিন্ন সূত্রমতে, আগস্ট মাসের ৫ তারিখের পরে জামিন পাওয়া ২১০ জন এবং কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ১২১ জন চরমপন্থী বর্তমানে প্রত্যন্ত ও পাহাড়ি অঞ্চলে তাদের নেটওয়ার্ক পুনর্গঠন করছে এবং প্রশিক্ষণ চালাচ্ছে। তারা শীঘ্রই বাংলাদেশে উচ্চ-পর্যায়ের জঙ্গি হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে। সিটি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা সন্ত্রাস দমনের কাজকে অকার্যকর করার জন্য সিটি ইউনিটের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সুচিন্তিত কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। সিটি-সংক্রান্ত কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে বদলি করা হচ্ছে, শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে এবং অনেককে কারাবন্দীও করা হয়েছে। চার্ট ২ অনুযায়ী, সিটি ইউনিটের ৫ জন কর্মকর্তাকে কারাবন্দী করা হয়েছে, ১১ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং ৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এছাড়া, ২৭ জন উচ্চ-পদস্থ, ৭৬ জন মধ্যম-স্তরের এবং ১১৭ জন নিম্ন-স্তরের কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এই স্থানচ্যুত কর্মকর্তাদের পরিবর্তে যারা নিযুক্ত হচ্ছেন, তারা নাকি পুলিশ বাহিনীর মধ্যে থাকা একটি চরমপন্থী উপদলের অংশ। অভিযোগ রয়েছে, বর্তমান সিটি ইউনিট পরোক্ষভাবে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রমে সহায়তা করছে, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি। বিগত সফল অভিযানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে পরিচালিত সকল গুরুত্বপূর্ণ সন্ত্রাস দমন অভিযান, যেমন “অপারেশন ঈগল হান্ট” (চাপাইনবাবগঞ্জে ৪ জেএমবি সদস্য নিহত), “অপারেশন হলি আর্টিজান” (গুলশানে ২০১৬ সালের হামলায় জড়িতদের নিধন), এবং অন্যান্য সফল অভিযানগুলোর সাথে যুক্ত সিটি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বর্তমানে ‘গুম কমিশন’ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই পদক্ষেপগুলোকে সিটি কর্মকর্তাদের কর্তৃত্ব ও কার্যকারিতা ক্ষুণ্ণ করার প্রতিশোধমূলক প্রক্রিয়া হিসেবে দেখা হচ্ছে। গুম কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন এই আইনি প্রক্রিয়া পরিচালনাকারী ‘জোরপূর্বক গুম কমিশন’ এর নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। কমিশনের প্রধান, হাই কোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল হোসেন চৌধুরী, কুখ্যাত জঙ্গি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক ওরফে জিয়ার মামা ও শ্বশুর। জিয়া বাংলাদেশে একাধিক উচ্চ-পর্যায়ের হামলায় জড়িত থাকার জন্য দোষী সাব্যস্ত এবং বর্তমানে পলাতক। এছাড়া কমিশনের আরেক সদস্য, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি নাবিলা ইদ্রিস, চরমপন্থী গোষ্ঠী হিযবুত তাহরীর-এর সঙ্গে যুক্ত বলে জানা যায়। কমিশনের প্রধানের সঙ্গে কুখ্যাত জঙ্গির পারিবারিক সম্পর্ক থাকায় এর সুপারিশগুলি উদ্দেশ্যমূলক ও পক্ষপাতহীন হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাষ্ট্রযন্ত্রের এই ধরনের প্রতিশোধমূলক ব্যবহার এবং সিটি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলমান থাকার ঘটনা ইঙ্গিত দেয় যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রকারান্তরে বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গিদের কার্যক্রমকে সুবিধা প্রদান করছে ও সমর্থন জানাচ্ছে।
