সূচকের বড় পতনে বিপর্যস্ত শেয়ারবাজার, লেনদেন আবার নামল ৩০০ কোটির ঘরে
টানা দরপতন ও লেনদেন খরার দুষ্টচক্র থেকে এখনও বের হতে পারছে না দেশের শেয়ারবাজার। আজ সোমবার সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আবারও বড় পতন ঘটেছে সূচকে। বাজারে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে যাওয়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৪০ পয়েন্ট পড়ে নেমে এসেছে ৫ হাজার ৮৬ পয়েন্টে। একই সঙ্গে লেনদেনও কমে ফের ৩০০ কোটির ঘরে নেমে গেছে। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই ধারা লক্ষ্য করা গেছে। বাজারটিতে দাম কমেছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের, ফলে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই কমেছে ৬৩ পয়েন্টে। যদিও সেখানে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ৭১ লাখ টাকায়, তবু বাজারে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়নি। এর আগে গত ২২শে অক্টোবর ডিএসইতে লেনদেন নেমেছিল ৩৫৫ কোটি টাকায়, যা চলতি বছরের ২৩শে জুনের পর সর্বনিম্ন। এরপর সামান্য উত্থানের পর মাত্র দুই কার্যদিবসের ব্যবধানে আবারও লেনদেন নেমে গেল ৩০০ কোটির ঘরে—যা পুঁজিবাজারে আস্থাহীনতার আরেকটি ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। সোমবার দিনের শুরুতে ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বাড়ার মাধ্যমে। শুরুতে সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও ২০ মিনিট না যেতেই বাজার ঘুরে দাঁড়ায় ঋণাত্মক ধারায়। এরপর থেকে দিনভর চলে শেয়ার বিক্রির চাপ, ফলে সূচকের পতন অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত। দিনশেষে ডিএসইতে ৮১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, বিপরীতে ২৬০টির কমেছে এবং ৫৫টির অপরিবর্তিত রয়েছে। ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ প্রদানকারী ৪৩ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বেড়েছে, অথচ ১৫০টির কমেছে। মাঝারি মানের কোম্পানির মধ্যে ২০টির বেড়েছে এবং ৫২টির কমেছে। আর বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে ‘জেড’ গ্রুপভুক্ত ৫৮টি প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে, বেড়েছে মাত্র ১৮টির। সূচকের পাশাপাশি লেনদেনেও বড় ধস নেমেছে। আগের কার্যদিবসে যেখানে লেনদেন হয়েছিল ৪৬১ কোটি ৫৫ লাখ টাকার, সোমবার তা কমে দাঁড়ায় ৩৯৪ কোটি ১৮ লাখ টাকায়—একদিনেই কমেছে ৬৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। লেনদেনে শীর্ষে ছিল ওরিয়ন ইনফিউশন, যার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৩ কোটি ৬২ লাখ টাকার। দ্বিতীয় স্থানে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ (১৫ কোটি ২০ লাখ) এবং তৃতীয় স্থানে আনোয়ার গ্যালভানাইজিং (১৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকার)। এছাড়া শীর্ষ দশে ছিল প্রগতি ইন্স্যুরেন্স, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, রবি, সিটি ব্যাংক, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ব্র্যাক ব্যাংক। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ১৭ পয়েন্টে এবং ডিএসই শরিয়াহ সূচক কমেছে ১১ পয়েন্টে, যা বাজারে সামগ্রিক দুর্বলতারই প্রতিফলন। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, টানা দরপতন, নিম্ন লেনদেন এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার কারণে শেয়ারবাজার একপ্রকার স্থবির হয়ে পড়েছে। নতুন বিনিয়োগ না আসা, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহ ও বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপের অভাব—সব মিলিয়ে সূচকের বড় পতন এখন শেয়ারবাজারের নিয়মিত চিত্রে পরিণত হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক বলেন, “এই বাজারে এখন আস্থা সংকটই সবচেয়ে বড় সমস্যা। বিনিয়োগকারীরা বিশ্বাস হারাচ্ছেন যে শেয়ারবাজারে স্থিতি বা স্বচ্ছতা রয়েছে। সূচক নামছে, লেনদেন কমছে—এটাই এখন বাস্তবতা।”
