সজীব ওয়াজেদ জয়: একমাত্র অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনই দেশে স্থিতিশীলতা বয়ে আনতে পারে

২৪ অক্টোবর, ২০২৫ | ৬:৫১ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অচলাবস্থা দূর করতে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনই একমাত্র সমাধান বলে মন্তব্য করেছেন সেনা-ছাত্র হামলায় দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। গতকাল বুধবার অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যদি অন্তর্ভুক্তিমূলক বা সর্বসম্মত নির্বাচন না দেয়, তবে দেশ রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীলই থাকবে। সজীব ওয়াজেদ বলেন, “এই নিষেধাজ্ঞা (আওয়ামী লীগের ওপর) প্রত্যাহার করতে হবে। নির্বাচন হতে হবে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু।” তিনি অভিযোগ করেন, “এখন যা ঘটছে, তা হচ্ছে আমার মা ও আওয়ামী লীগের নেতাদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা। এটি বিচারপ্রক্রিয়ার আড়ালে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো।” বাংলাদেশে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। গত বছর দাঙ্গা-হামলার মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করা হয়, যার মাধ্যমে শেখ হাসিনার টানা ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এরপর থেকে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। তাঁর দেশত্যাগের তিনদিন পর ড. ইউনূস ক্ষমতারোহন করেন। এবং চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করে দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার এবং সংস্কার চালুর প্রতিশ্রুতি দেন। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী এবং সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম চলতি বছরের মে মাসে নিষিদ্ধ করে ইউনূস সরকার। দলের অর্ধশতাধিক সংসদ সদস্য, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দ গ্রেপ্তার হন। মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য জীবন রক্ষায় দেশের বাইরে চলে যেতে বাধ্য হন। শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্য এবং তাঁর সরকারের দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ থেকে শুরু করে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হয়েছে। সজীব ওয়াজেদ বলেন, যদি আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট সময় না দেওয়া হয়, তবে জনগণ বা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক কেউই সেই নির্বাচনকে বৈধ হিসেবে গ্রহণ করবে না। তাঁর ভাষায়, “আমরা কোনো ধরনের প্রস্তুতি নিতে পারছি না। শেষ মুহূর্তে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও নির্বাচনটি হবে প্রহসন।” এপি জানিয়েছে, বাংলাদেশের ১৭ কোটি জনসংখ্যার এই সংসদীয় গণতন্ত্রে বর্তমানে ৫২টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে এবং দেশের রাজনীতি এখন এক সঙ্কটের মুখে। প্রতিবেদনে বলা হয়, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন দল বিএনপি আসন্ন নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। অপর একটি বড় দল জাতীয় পার্টি এখন প্রকাশ্যে কার্যক্রম চালাতে পারছে না; দলের কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং সমাবেশগুলো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক হওয়ার ‘অপরাধে’। এদিকে শেখ হাসিনা সরকারের সময় নিষিদ্ধ হওয়া যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতে ইসলামী রাজনীতিতে প্রকাশ্য হয়েছে। গত এক বছরে দলটি তাদের কার্যক্রম বাড়িয়েছে এবং আরও কিছু কট্টর ইসলামপন্থি দল ও গোষ্ঠীর সঙ্গে জোট গঠনের চেষ্টা করছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ তাঁর সাক্ষাৎকারে সতর্ক করে বলেন, “বাংলাদেশ অস্থিতিশীল থাকলে ইসলামপন্থিরা লাভবান হবে।” তিনি অভিযোগ করেন, ড. ইউনূস তাদের সহায়তা করছেন এবং “পাতানো নির্বাচনের” মাধ্যমে ইসলামপন্থিদের ক্ষমতায় আনতে চাইছেন। এপি জানায়, অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। সজীব ওয়াজেদ জাতিসংঘের প্রতিবেদনের বিরোধিতা করেছেন, যাতে বলা হয়েছিল যে, গত বছরের সরকারবিরোধী আন্দোলনে ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছে। জয় বলেন, ইউনূস সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নিজেই স্বীকার করেছেন, নিহতের সংখ্যা প্রায় ৮০০। “সব মৃত্যুই দুঃখজনক এবং এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রয়োজন” বলে উল্লেখ করেন জয়। একইসাথে তিনি মন্তব্য করেন, ইউনূস সরকার ও তার বাহিনীর হাতে ৫ই আগস্ট থেকে ১৫ই আগস্ট অব্দি নিহত হয়েছেন বাকিরা। যে হত্যাকাণ্ডগুলোর বিষয়ে ড. ইউনূস কোনো বিচার হবে না বলে ইতিমধ্যে ইনডেমনিটি জারি করেছেন। সজীব ওয়াজেদ অভিযোগ করেন, ইউনূস সরকারের মানবাধিকার রেকর্ড ভয়াবহ। তিনি জানান, আওয়ামী লীগের কয়েক লাখ কর্মী-সমর্থক গত এক বছর ধরে জেলে আছেন, জামিন পাচ্ছেন না এবং অনেকে হত্যাকাণ্ডের মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তিনি বলেন, “প্রায় ৫০০ আওয়ামী লীগ কর্মীকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়েছে, আর হেফাজতে মারা গেছে ৩১ জন।” তিনি আরও বলেন, “ইউনূস সরকারের সময় মানবাধিকার পরিস্থিতি অত্যন্ত নিষ্ঠুর অবস্থায় রয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষ করে হিন্দুরা এখন প্রধান লক্ষ্যবস্তু।” একইসাথে ইউনূস সরকারের সিদ্ধান্তে প্রতিবাদকারীদের দায়মুক্তি দেওয়াকে তিনি প্রশ্নবিদ্ধ বলেন। তাঁর অভিযোগ, ইউনূস সরকার শেখ হাসিনাকে নিয়ে একধরনের রাজনৈতিক ‘উইচ-হান্ট’ চালাচ্ছে, যেখানে তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে কথিত ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে। গত সপ্তাহে একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালের এক প্রসিকিউটর শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন। শেখ হাসিনা নিজে সেই ট্রাইব্যুনালে আইনজীবী নিয়োগ দেননি। তাই এই বিচার প্রক্রিয়াকে তিনি ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার আগেই সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ বেমালুম অস্বীকার করেছে।