একের পর এক নারীসঙ্গ ও ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল, এনসিপি নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

২৩ অক্টোবর, ২০২৫ | ৫:২১ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতা মেরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একের পর এক নারীদের সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক, গোপনে অন্তরঙ্গ ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল, মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি, অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধ বালু ব্যবসাসহ একাধিক অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার একাধিক ভিডিও কল রেকর্ড, ছবি ও অডিও ফাঁস হয়েছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। রাজৈর উপজেলার শংকরদী গ্রামের ফার্নিচার পলিশ মিস্ত্রি সিরাজ বেপারীর ছেলে মেরাজুল ইসলাম শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। কিন্তু নারীঘটিত কেলেঙ্কারি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় পরপর চারটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি। বর্তমানে এনসিপির রাজনীতির আশ্রয়ে থেকে নিজেকে প্রভাবশালী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। ভুক্তভোগী এক নারী অভিযোগে জানিয়েছেন, তিন বছর ধরে মেরাজুল ইসলামের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। একপর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন মেরাজুল। পরে সুযোগ বুঝে তার মোবাইল থেকে গোপন ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করেন এবং তা ফাঁসের ভয় দেখিয়ে ২ লাখ টাকা আদায় করেন। পুনরায় টাকা দাবি করে হুমকি দিলে তিনি রাজৈর থানায় এবং সেনা ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দেন। ফাঁস হওয়া ৬ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও কল রেকর্ডে মেরাজুলকে এক নারীর সঙ্গে অশ্লীল ভাষায় কথা বলতে শোনা যায়। তিনি জোর করে ওই নারীকে কথা বলতে বাধ্য করেন। একপর্যায়ে ওই নারী কলটি কেটে দেন। থ্রি-ডি ডিজিটাল স্কুল, ইকরা স্কুল, কিডস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও মডেল স্কুল—এই চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নারীঘটিত কেলেঙ্কারি ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বহিষ্কৃত হন মেরাজুল ইসলাম। স্কুল পরিচালনা পর্ষদ সূত্রে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। একই সঙ্গে প্রবাসী পরিবারের নারীদের টার্গেট করে তাদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়াতেন। এসব অভিযোগে চারটি স্কুল থেকেই তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। গত বছর সরকারবিরোধী আন্দোলনে সহিংসতায় সক্রিয় থাকা মেরাজুল সরকার পতনের পর এনসিপি নেতা হন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই মাদারীপুর জেলা সমন্বয় কমিটির সদস্য পদ বাগিয়ে নেন। রাজৈর, তাতিকান্দা, হোসেনপুর ও পাইকপাড়া এলাকায় নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন তিনি। স্থানীয়রা জানান, তার সিন্ডিকেটের কারণে নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন ও ভূমিক্ষয় বেড়েছে। কেউ বাধা দিলে হামলা ও মামলার ভয় দেখানো হয়। গোপালগঞ্জ সদর থানার একটি মিথ্যা মামলায় নাম ঢোকানোর ভয় দেখিয়ে রাজৈর উপজেলার আওয়ামী লীগের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং নেতাকর্মীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগও উঠেছে মেরাজুল ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই জানান, টাকার বিনিময়ে মামলার তালিকা থেকে নাম কেটে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয় এবং না দিলে মামলায় নাম ঢোকানোর হুমকি দেওয়া হয়। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মাদারীপুর জেলা এনসিপির সদস্য মেরাজুল ইসলাম। তার দাবি, নারীঘটিত বিষয়, স্কুল, বালু ব্যবসা বা টাকা নেওয়ার কোনো অভিযোগই সত্য নয়। তিনি জানিয়েছেন, তার একটি ফোন হারিয়ে গেছে, সেই ফোনে কী ছিল তা তিনি জানেন না। মাদারীপুর জেলা এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী আজগর শেখ জানিয়েছেন, মেরাজুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিষয়টি কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানানো হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহফুজুল হক জানিয়েছেন, মেরাজুলের নেতৃত্বে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পাইকপাড়া ও আশপাশের এলাকা থেকেও অবৈধ বালু উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রশাসন খবর পেলেই ব্যবস্থা নেবে, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, মিথ্যা মামলা বা হয়রানির বিষয়ে কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।