শুভ জন্মদিন, কিংবদন্তি নেতা তোফায়েল আহমেদ

বাংলাদেশের রাজনীতির এক কিংবদন্তি পুরুষ, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও রাজনৈতিক সচিব এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সারথি জননেতা তোফায়েল আহমেদের জন্মদিন। তোফায়েল আহমেদ তাঁর রাজনৈতিক জীবনে ছাত্রনেতা থেকে জননেতা হয়েছেন আত্মত্যাগ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথে নিরবিচ্ছিন্ন প্রত্যয়ের মধ্য দিয়ে। তিনি কেবল একজন রাজনীতিবিদ নন, তিনি স্বাধীনতার আন্দোলন, জাতীয় চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক রাজনীতির অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। তোফায়েল আহমেদ ১৯৪৩ সালের ২২শে অক্টোবর ভোলার কৌরালিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মৌলভী আজহার আলী এবং মাতা ফাতেমা বেগম। ভোলা সরকারি হাই স্কুল থেকে ১৯৬০ সালে মাধ্যমিক, বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে ১৯৬২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক এবং পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকাবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর (এম.এসসি) ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৬৬-৬৭ শিক্ষাবর্ষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল (বর্তমানে শহিদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল)-এর ভিপি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৬৮-৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দেন। আগরতলা মামলা থেকে মুক্তির পর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি এবং জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৬৯ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) “বঙ্গবন্ধু” উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১০ লাখ মানুষের ঐতিহাসিক এই সমাবেশে তৎকালীন ডাকসুর ভিপি এবং সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি তোফায়েল আহমেদ এই উপাধি ঘোষণা করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তোফায়েল আহমেদ জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি মুজিববাহিনীর অন্যতম সংগঠক হিসেবে দেশ-বিদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করা এবং আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁকে রাজনৈতিক সচিব হিসেবে নিয়োগ দেন। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে তোফায়েল আহমেদ রাষ্ট্র পরিচালনা, প্রশাসনিক সংস্কার ও যুব সংগঠন গঠনে নিবিড়ভাবে কাজ করেন। বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে তিনি শিখেছিলেন রাজনীতির নৈতিকতা, নেতৃত্ব ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার শিক্ষা যা পরবর্তী জীবনে তাঁর আদর্শের ভিত্তি হয়ে ওঠে। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের পুনর্গঠন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে তোফায়েল আহমেদ শিল্পমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান এবং শিল্পায়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন। পরে ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে সফলভাবে নেতৃত্ব দেন, যার ফলে বাংলাদেশ রপ্তানি, আঞ্চলিক বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক কূটনীতিতে শক্তিশালী অবস্থান অর্জন করে। তোফায়েল আহমেদের জীবন ও কর্ম বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ছাত্রনেতা হিসেবে গণঅভ্যুত্থানে অবদান, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে রাজনৈতিক দায়িত্ব, পরবর্তী সময়ে সাংসদ ও মন্ত্রীর দায়িত্বে থেকে তিনি বাংলাদেশের মানুষের আপন হয়ে আছেন। আজ তাঁর জন্মদিনে জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে বঙ্গবন্ধুর সেই প্রজ্ঞাবান সহযোগীকে, যিনি জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে বঙ্গবন্ধুর দর্শনকে বুকে ধারণ করে জাতির পথচলায় আলোকবর্তিকা হয়ে আছেন।