ভারতের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের দাবি অস্বীকার করলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে সই করা ১০টি চুক্তি বাতিল হয়েছে বলে যে দাবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, সেটি সম্পূর্ণ অসংগত এবং ভুল তথ্যভিত্তিক। এই বক্তব্যে স্পষ্ট করে বলেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে কোনো চুক্তি বাতিলের কোনো সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়নি, এবং এ ধরনের গুজব বিলাসপূর্ণ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা। রবিবার (১৯ অক্টোবর) যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার ফেসবুক পোস্টে দাবি করেন, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে করা ১০টি চুক্তি ও প্রকল্প বাতিল হয়েছে, এবং বাকিগুলো বিবেচনাধীন রয়েছে। তালিকায় তিনি উল্লেখ করেন—আকাশপথে পণ্য পরিবহন চুক্তি, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সাপোর্ট ইউনিট, আশুগঞ্জ-আগরতলা করিডোর, ফেনী নদী পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প, মিরসরাই ও মোংলায় ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ আরও কয়েকটি। এই পোস্টটি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়ে ওঠে এবং রাজনৈতিক বৃত্তে বিতর্কের জন্ম দেয়। এই দাবির জবাবে সোমবার রাতে (২০ অক্টোবর) এক সাংবাদিক সম্মেলনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “এই তথ্যগুলো সম্পূর্ণ ভুল এবং অতিরঞ্জিত। আমরা ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করার লক্ষ্যে কাজ করছি। কোনো চুক্তি বাতিলের কোনো প্রক্রিয়া চলছে না।” তিনি আরও জানান, এ ধরনের অপপ্রচার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে, যা দুই দেশের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এই বক্তব্যের পর যুব উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পোস্ট নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক তীব্র হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারা এটিকে “সত্য উন্মোচন” বলে দাবি করছেন, যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমর্থকরা এটিকে “ভুল তথ্য ছড়ানোর কৌশল” বলে অভিহিত করছেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সংবেদনশীলতা তুলে ধরেছে, বিশেষ করে গত বছরের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে চলমান আলোচনার প্রেক্ষাপটে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভারতের সঙ্গে চলমান চুক্তিগুলোর মধ্যে কোনো পরিবর্তন হয়নি, এবং যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হবে। উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন আরও বলেন, “আমরা অস্ট্রেলিয়া, চীনসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখব। এই ধরনের অপপ্রচার থেকে সাবধান থাকতে হবে।” এই ঘটনা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টার এই স্পষ্টীকরণ দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে অবিশ্বাস দূর করতে সাহায্য করবে। তবে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো তথ্যের যাচাইয়ের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তুলেছে এই ঘটনা।