ইউনূস সরকারের অর্থ ব্যবস্থাপনায় অনাস্থা: নির্বাচিত সরকার ছাড়া ষষ্ঠ কিস্তির ৮০ কোটি ডলার ছাড়বে না আইএমএফ

২২ অক্টোবর, ২০২৫ | ৭:৫১ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে তার ৫.৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির ষষ্ঠ কিস্তি ছাড়ার বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে। নির্বাচিত সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্ত এবং নতুন প্রশাসনের সঙ্গে সংস্কার প্রতিশ্রুতি নেওয়া না হওয়া পর্যন্ত এই কিস্তির অর্থ প্রদান করা হবে না। এতে প্রায় ৮০ কোটি ডলারের ঋণকিস্তি স্থগিত থেকে যাবে, যা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ ব্যবস্থাপনায় আনাস্থার প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে। সম্প্রতি ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাঙ্ক ও আইএমএফ-এর যৌথ বার্ষিক সভার সময় বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর আইএমএফের সঙ্গে বৈঠক করেন। সভায় আইএমএফের কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে জানান, নির্বাচনের পর গঠিত নতুন সরকারের সঙ্গে ঋণ শর্তাবলী এবং চলমান সংস্কার কর্মসূচির বিষয়ে পুনরায় আলোচনা করতে চান। এর ফলে ষষ্ঠ কিস্তির মুক্তি স্থগিত থাকবে, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। আইএমএফের এই সিদ্ধান্তের পটভূমিতে ড. মনসুর বলেন, “আমরা সংস্কারের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেছি, কিন্তু আইএমএফ নির্বাচিত সরকারের অংশগ্রহণ ছাড়া এগোতে অনিচ্ছুক। এটি আমাদের অর্থ ব্যবস্থাপনায় আস্থার অভাবের সংকেত।” বাংলাদেশ ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচি পায়, যা পরে ৮০০ মিলিয়ন ডলারের টপ-আপসহ ৫.৫ বিলিয়নে উন্নীত হয়। এ পর্যন্ত ৩.৬ বিলিয়ন ডলার প্রাপ্ত হয়েছে, কিন্তু ষষ্ঠ কিস্তির জন্য কোয়ান্টিটেটিভ পারফরম্যান্স ক্রাইটেরিয়া (কিউপিসি) পূরণের পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার শর্ত যুক্ত হয়েছে। ইউনূস সরকারের অর্থ ব্যবস্থাপনায় অনাস্থা: আইএমএফের এই অবস্থানকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অদক্ষতার ফল হিসেবে দেখছেন। গত ১৪ মাসে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় অস্থিরতা, রাজস্ব সংগ্রহের ব্যর্থতা এবং সংস্কারে দেরি দেখা গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সালমান ফরিদ বলেন, “ইউনূস সরকারের অরাজকতামূলক শাসনামলে অর্থনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। আইএমএফের এই শর্ত হলো সেই অনাস্থার প্রত্যক্ষ প্রমাণ। নির্বাচিত সরকার ছাড়া তারা ঋণ ছাড়তে চায় না, কারণ অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি অস্থায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।” আরেক বিশেষজ্ঞ, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ. মনসুর নিজেই এর আগে সতর্ক করে বলেছিলেন যে, রাজনৈতিক অস্থিরতা অর্থনৈতিক সংস্কারকে বাধাগ্রস্ত করছে। রাজস্ব সংগ্রহে লক্ষ্য অর্জন না করা (জুন ২০২৫ পর্যন্ত ৬৫ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি) এবং বিদেশি মুদ্রা রিজার্ভের চাপ এই অনাস্থাকে আরও গভীর করেছে। আইএমএফের মতে, নতুন সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কারের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে বাংলাদেশের ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত (বর্তমানে ৮.৫% এর নিচে) উন্নীত হয় এবং ঋণের বোঝা কমে।ষষ্ঠ কিস্তির শর্তাবলী: এক নজরেশর্তের ধরন অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “আইএমএফের টিম ২৯ অক্টোবর ঢাকায় আসছে দুই সপ্তাহের পর্যালোচনার জন্য। কিন্তু নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত কিস্তি ছাড়ার সম্ভাবনা নেই।” এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও চাপে ফেলেছে, যেখানে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং রিজার্ভ বাড়ানোর চ্যালেঞ্জ চলছে। রাজনৈতিক মহলে এটাকে ইউনূস সরকারের ব্যর্থতার প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা নির্বাচনের দাবিকে আরও জোরালো করতে পারে।