রূপপুরে রহস্যজনক মৃত্যুর তালিকায় আরও একটি নাম: দোভাষীর মরদেহ উদ্ধার

পাবনার ঈশ্বরদীতে অবস্থিত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত একজন দোভাষীর মৃত্যুতে আবারও রহস্যের ছায়া ঘনিয়েছে। শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের দিয়ার সাহাপুর এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই ঘটনা প্রকল্পের চারপাশে ঘনীভূত সন্দেহ ও প্রশ্নকে আরও জোরালো করেছে। মৃত ব্যক্তির নাম আনোয়ার আহমেদ (৫২), চট্টগ্রামের পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। তিনি গত এক বছর ধরে ঈশ্বরদীতে ভাড়া বাসায় থাকছিলেন এবং রাশিয়ান কোম্পানি নিকিমতে রুশ ভাষার দোভাষী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ইশ্বরদী থানার ওসি শহীদুল ইসলাম জানান, “মরদেহটি ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কোনো সন্দেহজনক চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মৃত্যুর কারণ নির্ধারণের জন্য মরদেহ পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অটোপ্সির জন্য পাঠানো হয়েছে।”এই মৃত্যু রূপপুরে বিগত বছরগুলোতে ঘটে যাওয়া একাধিক রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। উল্লেখ করা হয়, ২০১৭ সাল থেকে এই প্রকল্পে কর্মরত অন্তত ২৫ জন রুশ কর্মীর মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ২০২৫ সালেই ৫টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এসব মৃত্যুর কারণ হিসেবে হার্ট অ্যাটাক, আত্মহত্যা, ব্রেন স্ট্রোক, মানসিক চাপ, এবং পরিবেশগত ও সাংস্কৃতিক অসামঞ্জস্যের কথা উঠে এসেছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগও উঠেছে, যদিও তা প্রমাণিত হয়নি। আনোয়ার আহমেদের মৃত্যু নিয়ে স্থানীয়রা এবং প্রকল্পের অন্যান্য কর্মীরা বিস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্রকল্পের এক কর্মী নাম প্রকাশ না করে জানান, “এখানে কাজের চাপ অনেক। বিদেশি কর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় কর্মীরাও মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন। এই ঘটনাগুলো আমাদের ভাবিয়ে তুলছে।” রোসাটম কর্তৃপক্ষ এখনও এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি, তবে তারা পুলিশের তদন্তে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রূপপুরের এই ধারাবাহিক মৃত্যু প্রতিরোধে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা জোরদার করা, কর্মপরিবেশ উন্নত করা এবং নিরাপত্তা তদারকি বাড়ানো জরুরি। স্থানীয় রাজনীতিবিদরা সরকারের কাছে প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। এই ঘটনার তদন্তে নতুন কোনো তথ্য উঠে আসে কি না, সেদিকে নজর রাখছে দেশ-বিদেশের সংশ্লিষ্ট মহল।