লামিয়া কি তবে ডি-ফ্যাক্টো প্রধান উপদেষ্টা?

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক ইটালির রোম সফরের একটি ছবি ফেইসবুকে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে। ছবিতে দেখা যায়, রোম নগরীর মেয়রের অফিসে মেয়রের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। একাধিক সাবেক কূটনীতিক সফরটিকে অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করে রাষ্ট্রীয় শিষ্টাচার বা প্রটোকল ভেঙ্গে একজন সরকারপ্রধানের একটি নগরীর মেয়রের অফিসে গিয়ে সাক্ষাৎ করার কঠোর সমালোচনা করেছেন। ক্ষমতায় এসেই বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে ‘চোখে চোখ রেখে কথা বলা’র প্রতিশ্রুতি দিলেও ১৩ মাসে সরকারপ্রধানের ১৪টি বিদেশ সফর তোপের মুখে ফেলে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারকে। কূটনীতিকরা বলছেন, এসব সফরের অধিকাংশই ছিল অপ্রয়োজনীয়। কেউ কেউ দলবলসহ এসব বিদেশ সফরকে ’পিকনিক’ আখ্যা দিয়েছেন। ক্ষমতায় আসার আগে অর্থাৎ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, তাকে কারাগারে নেওয়া হলে তার স্ত্রীর ভীষণ সমস্যায় পড়ে যাবেন। মুহাম্মদ ইউনূসের স্ত্রী আফরোজা ইউনূস জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের সাবেক অধ্যাপক। ইউনূস বলেছিলেন, তার স্ত্রী একজন ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিবিনাশী রোগে আক্রান্ত। তিনি কিছুই মনে করতে পারেন না। ইউনূসের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা ছাড়া তিনি চলাফেরা করতে পারেন না। তাকে জেলে নেওয়া হলে তার স্ত্রীর জীবনযাপন অসম্ভব হয়ে পড়বে। ১৩ মাসের শাসনে ১৪টি বিদেশ সফরে যাওয়ার পর নেটিজেনরা প্রশ্ন তুলছেন, তাহলে এখন কি প্রফেসর ইউনূসের স্ত্রীর দেখভাল কে করছেন। উপরন্তু তারা বাঁকা চোখে দেশ-বিদেশে ইউনূসের সার্বক্ষণিক সঙ্গী লামিয়া মোর্শেদের উপস্থিতি নিয়েই প্রশ্ন করছেন। সরকারি সূত্রগুলো বলছে, দৃশ্যপটে লামিয়ার উপস্থিতি তার প্রভাবের ইঙ্গিত দিলেও দৃশ্যের আড়ালে তার প্রভাব অসীম। কয়েকটি সূত্র তাকে ডি-ফ্যাক্টো প্রধান উপদেষ্টা বলেও সম্বোধন করেন। প্রধান উপদেষ্টা পদে নিযুক্ত হওয়ার পর লামিয়া মোর্শেদকে সিনিয়র সচিবের মর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি সমন্বয়ক নিয়োগ করেন মুহাম্মদ ইউনূস। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ইউনূসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লামিয়া সর্বশেষ ইউনূস সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। সাবেক কূটনীতিকের মেয়ে লামিয়া পড়াশোনা করেছেন বিদেশে। তিনি এবং তার স্বামী কানাডার নাগরিক। রাজনীতিবিদদের অভিযোগ, প্রধান উপদেষ্টা সব প্রটোকল ভেঙ্গে একজন সিনিয়র সচিবকে বিদেশিদের সঙ্গে বৈঠকে তার পাশে রাখেন। উপেক্ষা করা হয়, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র সচিব এমনকি তার মুখ্য সচিবকেও। এমনকি স্ক্যান্ডিনেভিয়ান একটি দেশের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করতে লামিয়া মোর্শেদকে নোট ভারবাল দিয়েছিলেন। পররাষ্ট্র সচিব জসীমউদ্দীনকে জোরপূর্বক ছুটি দিয়ে এবং পরে অপসারণ করার পেছনেও লামিয়া মোর্শেদ ছিলেন বলে সরকারি সূত্রগুলো বলছে। প্রকৃতপক্ষে, লামিয়া মোর্শেদ ও উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বিদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয় সামলান বলে উপদেষ্টা পরিষদের একাধিক সদস্য জানিয়েছেন। ট্যারিফ আলোচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পাদিত নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্টের বিষয়সমূহ প্রধান উপদেষ্টা বাদে লামিয়া মোর্শেদ ও খলিলুর রহমানই জানেন। এনডিএ বা নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্টে আদৌ কি আছে সেটি সরকারের আর কেউ জানেন না। কয়েকজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টা যে কোন বিষয়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দেন না। লামিয়া মোর্শেদের ইচ্ছার বাইরে কোন সিদ্ধান্ত তিনি নিতে পারেন না। সূত্রগুলোর মতে, শুরুতে গ্রামীণের সঙ্গে সরকারের কাজকর্মে সুবিধার জন্য লামিয়াকে রিক্রুট করেন ইউনূস। কিন্তু ধীরে ধীরে ব্যক্তিগত সম্পর্কের সূত্রে সরকারের সব কাজকর্মে সক্রিয় হয়ে ওঠেন সাবেক অর্থমন্ত্রী এমএ মুহিতের ভাগ্নে বউ লামিয়া। বাড়াতে থাকেন গ্রামীণের সাম্রাজ্য। ক্ষমতায় এসে ডিজিটাল ওয়ালেট, বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন এমনকি আদম ব্যবসার লাইসেন্স নেয় গ্রামীণ। ইউনূসের বিরুদ্ধে এসব নিয়ে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের অভিযোগ উঠলেও তিনি তা আমলে নেননি। ইউনূসের ঘনিষ্ঠ মহল মনে করে, লামিয়া মোর্শেদের তৎপরতায় দ্রুত এই ব্যবসায়িক সুবিধা নিতে পেরেছেন ইউনূস। ইউনূসের অনুপস্থিতিতে গ্রামীণ সাম্রাজ্যে নিজের আধিপত্য কায়েমের চেষ্টারত লামিয়ার সঙ্গে ইউনূস পরিবারের বিবাদের আশঙ্কাও দেখছে অনেকে।