কী ঘটছে প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের কারখানায়? স্থায়ীভাবে বন্ধের হুঁশিয়ারি মালিকপক্ষের

আজ চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) একটি কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের মধ্যেই ঘটলো দেশের প্রধান ডেনিম রপ্তানিকারক প্যাসিফিক গ্রুপে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা। মামলা প্রত্যাহারের দাবিসহ ২২ দফা নিয়ে আন্দোলন করছে প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের বিভিন্ন ইউনিটের শ্রমিকরা। এ ঘটনায় হামলার শিকার হন আন্দোলনে যুক্ত না হওয়া অন্য পক্ষের শ্রমিক এবং কারখানার কর্মকর্তারা। আজ ১৬ই অক্টোবর, বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশ-৩ এর এসপি মোহাম্মদ সোলায়মান। প্যাসিফিক জিন্সের মানবসম্পদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চলতি বছরের ৫ই জানুয়ারিতে প্যাসিফিকে বেশ কিছু শ্রমিক আন্দোলন করে। তখন তারা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। এ বিষয়টি জানার পর কিছু শ্রমিক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গতকাল (বুধবার) আন্দোলনে নামে। এ নিয়ে মালিকপক্ষও পুলিশের সঙ্গে মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে আলাপ করছে। তবুও শ্রমিকরা অন্যদের কাজে যোগ দিতে বাধা দেয়। তারা মামলা প্রত্যাহারের ঘোষণা মালিক থেকে শুনতে চায়। এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এক পর্যায়ে আমাদের এমডি একটি ভিডিও বার্তা দেন। সেখানে তিনি সবাইকে কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যদি কেউ কাজ বন্ধ করে পরিবেশ নষ্ট করতে চায় তবে তিনি অনির্দিষ্টকালের জন্য ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন। তবুও সেই শ্রমিকরা আজ সকাল থেকে আন্দোলনে নামে। তারা অন্যদের বাধ্য করছে তাদের সাথে আন্দোলনে যোগ দিতে। যারা রাজি হয়নি, তাদের মারধর করে। এ সময় তাদের শান্ত করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগ এবং প্রোডাকশনের কয়েকজন কর্মকর্তা আহত হন, তাদের মারধর করা হয়। চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশ-৩ এর এসপি মো. সোলায়মান বলেন, শ্রমিকদের একটি পক্ষ আন্দোলনের নামে সংহিসতার চেষ্টা করছে। তারা অন্য শ্রমিকদের হামলা করেছে। পুলিশ সতর্ক অবস্থায় আছে। প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপ বাংলাদেশের অন্যতম বড় ডেনিম রপ্তানিকারক। ১৯৮৪ সাল থেকে চট্টগ্রামে উৎপাদন শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে তাদের ১৩টি কারখানায় ৩৫ হাজারের বেশি শ্রমিক কর্মরত। বছরে তারা ৪ কোটি পিস ডেনিম উৎপাদন করে। প্রতিষ্ঠানটির বছরে রপ্তানি আয় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। ৫০টির বেশি দেশে তারা পণ্য রপ্তানি করে। প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ কমে যাওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে শ্রমিকদের ওভারটাইমও কমে গেছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। ফলে বাড়তি মজুরির দাবিতে শ্রমিকদের অসন্তোষ বাড়তে থাকে। তৈরি পোশাক খাতে একে একে কারখানা বন্ধের প্রভাব দরিদ্র শ্রেণির ওপর: অর্থনীতির প্রাণ বিপন্ন বাংলাদেশের অর্থনীতির ৮৪% রপ্তানি আয় এবং ১১% জিডিপি যোগায় তৈরি পোশাক খাত। এখানে ৪১ লাখ শ্রমিক কর্মরত। কিন্তু গত বছরের আগস্ট থেকে সর্বশেষ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ২০০ পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে ১ লাখের বেশি শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। শ্রমিক নেত্রী নাজমা আক্তার বলেন, “১ লাখের বেশি শ্রমিক বেকার, যারা বড় অংশই নারী। এটি অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাড়াচ্ছে।” তৈরি পোশাক খাতের ৯৫% কারখানা স্থানীয় মালিকানাধীন হলেও, উৎপাদন ও সাপ্লাই চেইনের বড় অংশ বিদেশি ক্রেতা (ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রের বড় ব্র্যান্ড) নিয়ন্ত্রণ করে। বিশ্লেষকরা বলছেন, গত বছরের জুলাই থেকে শুরু রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে বাংলাদেশের পোশাক খাতে ক্রমশ কার্যাদেশ কমতে থাকে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে অতিরিক্ত ট্যারিফ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট, ব্যাংক লোনের অভাব, কাঁচামাল আমদানিতে এলসি বন্ধ হওয়াসহ বিভিন্ন কারণ। বড় বড় গ্রুপগুলো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জোরপূর্বক। বিজিএমইএ সতর্ক করেছে, “এই সংকট অবিলম্বে মোকাবিলা না করলে ২০২৬-এর নির্বাচনের আগেই আরও ২ লাখ শ্রমিক বেকার হতে পারে। যার প্রভাব পড়বে শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্যদের ওপরেও ।”