চরম সংকটে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, আশার আলো দেখছেন না শিল্পোদ্যাক্তারা

১৪ অক্টোবর, ২০২৫ | ৫:৩৬ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

দেশের অর্থনীতি আজ চরম এক সংকটময় সময় অতিক্রম করছে। পুঁজিবাজারে টানা পতন, মূল্যস্ফীতির রেকর্ড উচ্চতা, বিনিয়োগে স্থবিরতা, কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির আমদানি ঘাটতি, এবং ব্যাংকিং খাতে আস্থার অভাব—সব মিলিয়ে ধুঁকছে ব্যবসা-বাণিজ্য। ছোট-বড় প্রায় সব শিল্প প্রতিষ্ঠান টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে কর্মসংস্থান সংকট, বেতন-ভাতা বকেয়া, এবং বেড়ে চলা বেকারত্ব এবং সরকারের উদাসীনতা ও ব্যবসা বাণিজ্য বিরোধী অবস্থান। এমন অবস্থা থেকে উত্তরণের কোনো রাস্তা দেখছেন না দেশের শিল্পোদ্যাক্তারা। তাদের মতে, এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ না পেলে ব্যবসা বাণিজ্য সবই বন্ধ হয়ে যাবে, যার প্রভাব পড়বে দেশের প্রতিটি মানুষের ওপর। কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে অচিরেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের প্রায় সব অর্থনৈতিক সূচক এখন ভঙ্গুর অবস্থায়। শুধু প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) কিছুটা ভরসা দিচ্ছে। অন্যদিকে, রপ্তানি আয়ও কমতে শুরু করেছে। চলতি বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে রপ্তানি আয়ে যথাক্রমে ৩% ও ৪.৬১% হ্রাস পেয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমান সরকার ১৪ মাস পার করলেও তারা কোনো কার্যকরী আশ্বাস বা সহানুভূতির বার্তা পাননি। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ দেখা যায়নি। বরং, অনেক স্বনামধন্য ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছে সরকার ও তাদের লোকজন। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতিরাও এখন ঋণ খেলাপির তালিকায় নাম লিখিয়েছেন, যারা আগে কখনো খেলাপি ছিলেন না। ব্যাংকিং খাতেও আস্থাহীনতা প্রকট দেখা দিয়েছে। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী ঋণখেলাপি সংজ্ঞা পরিবর্তনের ফলে মাত্র এক বছরে খেলাপি ঋণ তিনগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকায়—মোট ব্যাংকঋণের প্রায় ৩৩%। অনেক সৎ উদ্যোক্তাও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, যাঁদের চলমান প্রকল্প থমকে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচ্চ সুদের হার (প্রায় ১৬%) অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এত উচ্চ সুদে কেউ নতুন উদ্যোগ নিতে সাহস পাচ্ছেন না। আগস্ট মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে মাত্র ৬.৩৫ শতাংশে, যা গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিশ্বব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার মতে, বাংলাদেশে এখন ব্যবসায়িক মন্থরতা চলছে। উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় কর্মসংস্থানও সংকটে। বড় বিনিয়োগও এখনো দেখা যাচ্ছে না না চীন, না ভারত থেকে। তবুও ব্যবসায়ীদের আশা, একটি অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। তারা চাইছেন, ইউনূস সরকার বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্থান্তর করুক। তাহলেই ব্যবসা-বিনিয়োগে আস্থা ফিরবে, এবং অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে—এই প্রত্যাশায় দিন গুনছেন দেশের উদ্যোক্তারা।