অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে জামায়াত ও এনসিপির হুমকি: রাজনৈতিক ঐক্যের ফাটল নাকি নতুন ষড়যন্ত্রের ছায়া?

১৪ অক্টোবর, ২০২৫ | ৫:৩৫ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর হুমকিমূলক বক্তব্য রাজধানীর রাজনৈতিক মহলে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। একদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সরকারের ৪-৫ জন উপদেষ্টার “কণ্ঠ রেকর্ড” থাকার কথা উল্লেখ করে সংশোধনের সুযোগ দিয়ে নাম প্রকাশের হুমকি দিয়েছেন। অন্যদিকে, ছাত্রনেতৃত্বাধীন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) উপদেষ্টাদের “সেফ এক্সিট প্ল্যান” নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থপরতার অভিযোগ করেছে। এই দুই দলের সমান্তরাল হুমকি—যারা নিজেরাই আন্দোলনের সময় সরকার গঠনে ভূমিকা রেখেছিল—রাজনৈতিক ঐক্যের ফাটল নির্দেশ করছে, যা নির্বাচনপূর্ব পরিস্থিতিতে নতুন সন্দেহের সৃষ্টি করেছে।জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. তাহেরের বক্তব্যটি মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর ২০২৫) ঢাকায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে পড়ে শোনা যায়। তিনি বলেন, “এই উপদেষ্টারা একটি বিশেষ দলের পক্ষে কাজ করছেন এবং জনপ্রশাসনকে দলীয় শাসনে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করছেন। তাদের অপকর্মের প্রমাণ আমাদের কাছে রেকর্ড আকারে আছে। আমরা সংশোধনের সুযোগ দিতে চাই, কিন্তু সময়মতো সাবধান না হলে জনসম্মুখে তাদের নাম প্রকাশ করা হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “জুলাইয়ের শহীদদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলে পরিণতি আরও খারাপ হবে।” এই বক্তব্য জামায়াতের কেন্দ্রীয় অফিস থেকে প্রাপ্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নথিভুক্ত হয়েছে। এদিকে, এনসিপির নেতৃত্বাধীন ছাত্রনেতা সামান্তা শারমিন ১২ অক্টোবর এক টিভি ইন্টারভিউতে উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে আরও কড়া অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, “প্রত্যেক উপদেষ্টা ইতিমধ্যে তাদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করে ফেলেছেন। অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে নিজেদের ‘সেফ এক্সিট’ এর ব্যবস্থা করছেন।” এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গৃহ বিষয়ক উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) এমএ জাহাঙ্গীর আলম ১২ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে জবাব দেন, “আমার সকল সন্তান দেশেই থাকে, কোনো ‘সেফ এক্সিট’ এর প্রয়োজন নেই।” এনসিপির এই অভিযোগ দলটির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ এবং সংবাদমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি বিশেষভাবে সন্দেহজনক কারণ জামায়াত এবং এনসিপি—দুটি দলই ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। আন্দোলনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে এনসিপির নেতৃত্বাধীন ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা (যেমন নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ) উপদেষ্টা পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন, যখন জামায়াতও সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থান পেয়েছে। কিন্তু এখন, নির্বাচনের প্রাক্কালে (২০২৬ সালের শুরুতে অনুমানিত), এই দুই দলের সমন্বিত হুমকি সরকারের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা নির্দেশ করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি কি আন্দোলনের চেতনা থেকে বিচ্যুতির ফল, নাকি নির্বাচনী লাভের জন্য নতুন কৌশল? এনসিপির কনভেনর নাহিদ ইসলাম ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে উপদেষ্টা পদ ত্যাগ করে দলটির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন, কিন্তু অন্যান্য ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টা পদে অবস্থান করছেন। জামায়াতের অভিযোগ অনুসারে, এই উপদেষ্টারা “একটি বিশেষ দলের” (সম্ভবত আওয়ামী লীগ বা অন্য কোনো পুরনো শক্তির) পক্ষে কাজ করছেন, যা জুলাই আন্দোলনের জন্য বিশ্বাসঘাতকতা। এনসিপির অভিযোগে বলা হয়েছে, উপদেষ্টারা শিক্ষা ও জনকল্যাণের পরিবর্তে ব্যক্তিগত ভবিষ্যৎ নিয়ে ব্যস্ত। এই দ্বৈত অভিযোগ রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন তুলেছে: কি কারণে আন্দোলনের সঙ্গী দলগুলো এখন সরকারের বিরুদ্ধে একসঙ্গে দাঁড়াচ্ছে? এটি কি নির্বাচনী কৌশল, নাকি সত্যিই অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত? প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের কার্যালয় এখনও এই অভিযোগের জবাব দেয়নি। তবে সরকারি সূত্রগুলো বলছেন, এই হুমকিগুলো নির্বাচন কমিশনের সংস্কার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা হতে পারে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই ঘটনা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থিতিশীলতা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে এবং জুলাই চেতনার সত্যতা যাচাইয়ের দাবি জোরালো করেছে। পরিস্থিতি আরও জটিল হলে নির্বাচনী প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।