গ্রেফতারের ৪৮ ঘণ্টা পরও আদালতে তোলা হয়নি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ১৪ সেনা কর্মকর্তাকে

১৪ অক্টোবর, ২০২৫ | ৫:৩৩ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানার ভিত্তিতে গ্রেফতার ১৪ জন বাংলাদেশি সেনা কর্মকর্তাকে ঢাকা সেনানিবাসের একটি বিশেষ কারাগারে (সাব-জেল) রাখা হয়েছে। তবে গ্রেফতারের ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও তাদের এখনও আদালতে হাজির করা হয়নি, যা বাংলাদেশের ফৌজদারি কার্যবিধি (সিআরপিসি) অনুযায়ী বাধ্যতামূলক। সূত্র জানায়, ১১ অক্টোবর সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়। তবে গুম, গোপন আটক ও নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত এই কর্মকর্তারা আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ পেয়েছেন কি না, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিযুক্ত কর্মকর্তারা যদি সত্যিই গ্রেফতার থাকেন, তাহলে এই পদক্ষেপ আইনবহির্ভূত ও সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী, কারণ বাংলাদেশের আইনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির না করে কাউকে আটক রাখা বেআইনি। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, ওয়ারেন্টের মাধ্যমে কাউকে গ্রেফতার করা হলে তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করতে হয়। এই সময়সীমা অতিক্রম করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হেবিয়াস করপাস রিটের মাধ্যমে মুক্তি পাওয়ার অধিকারী হন। ৮ অক্টোবর আইসিটি ২৪ জন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর, ঢাকা সেনানিবাস কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে সেনানিবাসের একটি বিশেষ কারাগারে রাখা হয়। এরপর ১২ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস (এমইএস)-এর একটি স্থাপনাকে সাব-জেল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে ওই ২৪ কর্মকর্তার বিচার অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি, তাদের ভিজিটিং সিনিয়র অফিসার্স’ কোয়ার্টারস (ভিএসওকিউ) ভবনে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ভবনটির নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও কোনো অঘটন এড়ানোর জন্য। জানা গেছে, বিশেষ কারাগারে থাকা ২৪ কর্মকর্তার মধ্যে ১৪ জনকে শিগগিরই ভিএসওকিউ ভবনে স্থানান্তর করা হবে। তবে ১৯৫২ সালের সেনা আইন অনুযায়ী, সেনা সদস্যদের গ্রেফতার ও আদালতে হাজির করার প্রক্রিয়া ফৌজদারি কার্যবিধি থেকে ভিন্ন। আইনের অধ্যায় ৮-এর ধারা ৭৪ অনুযায়ী, কোনো সেনা সদস্যকে তদন্ত ছাড়া ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় আটক রাখা যাবে না, যদি না জনস্বার্থে তা অপরিহার্য মনে হয়। অন্যদিকে, অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩-এর ধারা ৩(২)(ক), ৩(২)(এফ), ৩(২)(জি), ৩(২)(এইচ), ৪(১), ৪(২), ৪(৩) এবং ২০(২) ও ২০এ ধারার আওতায় আনা হয়েছে। ৮ অক্টোবরের আইসিটির আদেশে বলা হয়, “অভিযুক্তরা মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছে, যা ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ধারা ৩(২) ও ৪(১)-৪(৩)-এর আওতায় পড়ে।” গত ১২ অক্টোবর সেনাবাহিনীর পক্ষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে মেজর জেনারেল মোহাম্মদ হাকিমুজ্জামান বলেন, “ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জরুরি” এবং সেনাবাহিনী “ন্যায় ও জবাবদিহিতার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ।” তবে তিনি অভিযুক্তদের গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও আদালতে হাজির না করার বিষয়টি উল্লেখ করেননি। বিশেষজ্ঞদের মতে, অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের আলাদা বিশেষ কারাগারে রাখার সিদ্ধান্তটি দেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী, কারণ রাজনৈতিক বন্দিদের (যেমন বহু আওয়ামী লীগ নেতা) গ্রেফতারের পর ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের মতো বেসামরিক জেলে পাঠানো হয়। এদিকে, আরও জানা গেছে যে, অভিযুক্ত কর্মকর্তারা অন্তত ১২ অক্টোবর রাত পর্যন্ত নিজেদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পেরেছিলেন।