জামায়াত-শিবিরের খুনি চক্র বেকসুর খালাস: রাবি ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হত্যা মামলার রায়ে ক্ষোভ

১২ অক্টোবর, ২০২৫ | ১১:১৬ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গুপ্ত সংগঠন শিবিরের সন্ত্রাসীদের হাতে ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেনের হত্যা মামলার রায়ে সব আসামি বেকসুর খালাস পেয়েছেন। ১৫ বছর আগে সংঘটিত এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে অভিযুক্ত ছিল জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্ব, কিন্তু আদালতের রায়ে তারা সবাই মুক্তি পাওয়ায় ক্ষোভ ও বিস্ময় দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। রোববার দুপুরে রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক জুলফিকার উল্লাহ এ রায় ঘোষণা করেন। মামলার ১১৪ আসামির মধ্যে ৯ জন ইতোমধ্যে মারা গেছেন, জীবিত ১০৫ জনের মধ্যে মাত্র ২৫ জন উপস্থিত ছিলেন। আদালতের সাক্ষ্য-প্রমাণে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় সবাইকে বেকসুর খালাস দেন। এই মামলায় যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন কেন্দ্রীয় আমির রাজাকার মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল রাজাকার আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির রাজাকার দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, রাজশাহী মহানগর আমির আতাউর রহমানসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের শীর্ষ ১১৪ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছিল। ২০১০ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের ওপর হামলা চালায় গুপ্ত সংগঠন শিবিরের সন্ত্রাসীরা। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ কর্মী গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ফারুক হোসেনকে ধরে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। পরদিন তার মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার একটি ম্যানহোলে পাওয়া যায়—যা সারাদেশে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করেছিল। ঘটনার পরদিন ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম অপু বাদী হয়ে মতিহার থানায় মামলা করেন। এতে ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ২০–২৫ জনকে আসামি করা হয়। ২০১২ সালের ২৮শে জুলাই পুলিশ আদালতে ১ হাজার ২৬৯ পৃষ্ঠার একটি অভিযোগপত্র জমা দেয়, যেখানে যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গুপ্ত সংগঠন শিবিরের তৎকালীন সভাপতি, সম্পাদক ও বিভিন্ন হল শাখার দায়িত্বশীল নেতাদের অভিযুক্ত করা হয়। ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংগঠনগুলোর জানায়, জামায়াত-শিবির বাংলাদেশের ইতিহাসে ধারাবাহিকভাবে হত্যা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের রাজনীতি করেছে। ফারুক হত্যাকাণ্ড সেই ধারাবাহিকতারই অংশ ছিল। অথচ ১৫ বছর পরও এ মামলায় কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলো না। একাধিক ছাত্রনেতার ভাষ্য, বর্তমান সরকার রাজনৈতিক সুবিধা ও আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে এখন জামায়াতকে নরম চোখে দেখছে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত জামায়াত এখনো দেশবিরোধী নেটওয়ার্ক চালাচ্ছে—তার পরও প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থা যেন তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আলী আশরাফ মাসুম বলেন, রায়ে খুশি-অখুশি এখনই বলা যাবে না। রায়ের কপি হাতে পেলে পর্যালোচনা করব। তবে আমরা শুরু থেকেই বলেছি—এই মামলার তদন্তে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রকৃত আসামিদের আড়াল করা হয়েছিল। মানবাধিকারকর্মী ও বিশ্লেষকদের মতে, এমন নৃশংস হত্যার মামলায় ন্যায়বিচার না পেলে রাজনীতি এবং আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ভেঙে যাবে। বিচার বিলম্ব, সাক্ষীদের অনুপস্থিতি এবং তদন্তের দুর্বলতা বাংলাদেশের বহু রাজনৈতিক হত্যা মামলার মতো এখানেও ন্যায়বিচারের পথে প্রধান বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে।