পাকিস্তানের বিমান হামলার জবাব দিলো আফগানিস্থান: ১৫ পাকি সেনা হত্যা

১২ অক্টোবর, ২০২৫ | ১১:১৪ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

আফগানিস্তানের হেলমান্দ প্রদেশে ১৫ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে আফগান কর্তৃপক্ষ। তালেবান সরকার পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বিমান হামলার জবাবে সীমান্তবর্তী এলাকায় এই প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনা দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। হেলমান্দের প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র মাওলাওয়ি কাসিম রিয়াজ বলেছেন, বাহরামপুর জেলায় ডুরান্ড লাইনের কাছে গত রাতে আফগান বাহিনীর প্রতিশোধমূলক অভিযানে ১৫ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে। এ ছাড়া অভিযানের সময় আফগান বাহিনী তিনটি পাকিস্তানি সামরিক ফাঁড়িও দখল করেছে। সেইসঙ্গে পাক বাহিনীর গোলাবারুদ ও অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে বলে আফগান কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করেছে। গত ৯ই অক্টোবর রাতে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলসহ খোস্ত, জালালাবাদ ও পাকতিয়া প্রদেশে বিমান হামলা চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। এর জবাবেই পাল্টা এসব হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি আফগান কর্তৃপক্ষের। পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের দাবি, এই হামলাগুলো তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) নামক জঙ্গি গোষ্ঠীর নেতা নুর ওয়ালি মেহসুদসহ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় সদস্যকে লক্ষ্য করে করা হয়েছে। পাকিস্তানি নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মতে, কাবুলের আব্দুল হক স্কোয়ারের কাছে টিটিপির একটি যানবাহন লক্ষ্যবস্তু ছিল, এবং হামলায় অন্তত দুজন টিটিপি নেতা নিহত হয়েছে। তবে, নুর ওয়ালি মেহসুদের মৃত্যু নিশ্চিত হয়নি। আফগান তালেবানের প্রতিরক্ষামন্ত্রক জবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, পাকিস্তানি হামলায় কোনো বেসামরিক হতাহতের খবর নেই, তবে এটি আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি বলেছেন, “এই হামলার পরিণতি হবে,” এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হবে। এরপরই ১০ই অক্টোবর রাতে আফগান বাহিনী পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকায়—বিশেষ করে বাজৌর জেলা এবং সাউথ ওয়াজিরিস্তানে—প্রতিশোধমূলক গোলাবর্ষণ ও সীমান্ত অতিক্রম করে হামলা চালায়। আফগান কর্তৃপক্ষের দাবি, এতে পাকিস্তানি সামরিক ঘাঁটিগুলো লক্ষ্যবস্তু ছিল, যাতে অন্তত ১১ জন পাকিস্তানি সৈনিক নিহত হয়েছে। প্রতিশোধ নিতে হেলমান্দ, কান্দাহার, জাবুল, পাকতিকা, খোস্ত, নানগারহার এবং কুনারে পাকিস্তানি ফাঁড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। এসব প্রদেশের অবস্থান পাকিস্তান-আফগান সীমান্তে। পাকিস্তানের পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) পরিচালক আহমেদ শরীফ চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আফগানিস্তান থেকে চালানো জঙ্গি হামলার জবাবে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি। কিন্তু এখন আফগানিস্তানের এই প্রতিক্রিয়া অগ্রহণযোগ্য এবং এর জবাব দেওয়া হবে।” পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভি অভিযোগ করেছেন, তালেবান ‘বিনা উসকানিতে’ এই হামলা চালায় এবং তারা বেসামরিকদের লক্ষ্য করেও গুলি চালিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘পাকিস্তান প্রতিটি ইটের জবাব দেবে এক একটি পাথর ছুড়ে।’ নকভি আরও বলেন, ‘আফগানিস্তান আগুন ও রক্তের খেলা খেলছে।’ পাকিস্তানি সূত্র জানিয়েছে, আফগান হামলায় ১৫টি সীমান্ত চেকপোস্ট দখলের চেষ্টা করা হয়েছে, যাতে স্থানীয় বাসিন্দারা পালিয়ে যাচ্ছে।এই উত্তেজনার পটভূমি হলো দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ এবং জঙ্গি গোষ্ঠীর উত্থান। ২০২৪ সালে টিটিপির হামলায় পাকিস্তানে ৮৫৬টিরও বেশি ঘটনা ঘটেছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি। পাকিস্তান আফগানিস্তানকে টিটিপির আশ্রয়দাতা হিসেবে অভিযোগ করে আসছে, যখন আফগানিস্তান পাকিস্তানকে সীমান্ত অতিক্রমের অভিযোগ করে। ২০২৪ সালের মার্চ এবং ডিসেম্বরে পাকিস্তানের অনুরূপ বিমান হামলা হয়েছে, যাতে বেসামরিক মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এদিকে, পাকিস্তান-আফগান সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সৌদি আরব এবং কাতার উভয় পক্ষকে সংলাপ, কূটনীতি ও সংযমকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, “দুই দেশের মধ্যে এই চক্রাকার সহিংসতা আঞ্চলিক শান্তির জন্য বিপজ্জনক। আমরা কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানাই।” চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রও উভয় পক্ষকে সংযমের পরামর্শ দিয়েছে, কারণ এই সংঘাত চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিৱাইপিসি) এবং আঞ্চলিক বাণিজ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনা পাকিস্তান-আফগানিস্তান সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। ইসলামাবাদ-ভিত্তিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সৈয়দ মুহাম্মদ আলী বলেছেন, “পাকিস্তানের এই নীতি পরিবর্তন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট সতর্কবাণী, কিন্তু এতে বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো কঠিন হয়ে পড়ছে।” আফগান তালেবানের পক্ষ থেকে আরও প্রতিক্রিয়া আসতে পারে, যা পুরো অঞ্চলে নতুন সংকটের সূচনা করতে পারে।