১০ দিনে হাসপাতালে ভর্তি ৬ হাজার, মৃত্যু ২৬ জনের

১১ অক্টোবর, ২০২৫ | ৬:২২ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

বর্ষা মৌসুম শেষ হলেও বৃষ্টি কমেনি। এখনো রোদের ফাঁকে নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে। এই রোদ আর বৃষ্টির মধ্যে এডিস মশার লার্ভা ছড়িয়ে পড়ছে অনিয়ন্ত্রিতভাবে। ফলে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর ভিড় বাড়ছে। মৃত্যুও ঘটছে প্রতিদিন। গত বছর সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছিল অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে। সে সময় নভেম্বরই সবচেয়ে বেশি রোগী ধরা পড়ে। এবার চলতি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি রোগী ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে সেপ্টেম্বরে। অক্টোবরেও ডেঙ্গুর ভয়াবহতা অব্যাহত আছে। মাসের প্রথম ১০ দিনে প্রায় ৬ হাজার মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ডেঙ্গু নিয়ে। সরকারি হিসাবে, এ সময়ে মারা গেছেন ২৬ জন। চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৫৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে অন্তত ২২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃষ্টি এভাবে চলতে থাকলে অক্টোবরেই সেপ্টেম্বরের চেয়ে বেশি রোগী ও মৃত্যু হতে পারে। সেসঙ্গে ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর বিস্তার থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলেছেন, এই রোদ, এই বৃষ্টি—এমন অস্থির আবহাওয়া এডিস মশার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করছে। থেমে থেমে বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি, পলিথিন, খাবারের প্যাকেট, ডাবের খোসা, ছোট পাত্র—যেখানেই পানি জমে, সেখান থেকেই এডিস মশার বিস্তার ঘটছে। তাদের মতে, রোগী বাড়লে মৃত্যুও বাড়ে। চলতি বছরে ডেঙ্গু বাড়তে শুরু করে মে মাস থেকে। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও উচ্চঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলেছেন, নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বাসাবাড়ি পরিষ্কার রাখতে হবে। তিন দিনের বেশি জমে থাকা পানি ফেলে দিতে হবে। মশারি ব্যবহার করতে হবে। জ্বর অনুভব করলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, জুন মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ৫ হাজার ৯৫১ জন, মৃত্যু ১৯ জনের। জুলাইয়ে ভর্তি ১০ হাজার ৬৮৪ জন, মৃত্যু ৪১ জনের। আগস্টে ভর্তি ১০ হাজার ৪৯৬, মৃত্যু ৩৯ জনের। সেপ্টেম্বরে ভর্তি সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৮৬৬, মৃত্যু ৭৬ জনের। অক্টোবরের প্রথম ১০ দিনে ভর্তি ৫ হাজার ৮৫১ জন, মৃত্যু ২৬ জনের। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘মাঝখানে ডেঙ্গু কিছুটা কমেছিল। এখন বৃষ্টি হওয়ায় আবার বেড়েছে। অক্টোবরেও বাড়তে থাকবে।’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৯ সালে আক্রান্ত হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৭৪ জন, মৃত্যু ১৬৪ জনের। ২০২১ সালে ২৮ হাজার ৪২৯ জন আক্রান্ত, মৃত্যু ১০৫ জনের। ২০২২ সালে আক্রান্ত ৬২ হাজার ৩৮২, মৃত্যু ২৮১ জনের। ২০২৩ সালে ভয়াবহ রূপ নেয় ডেঙ্গু, আক্রান্ত ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯, মৃত্যু ১ হাজার ৭০৫ জন। ২০২৪ সালে ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন আক্রান্ত, মৃত্যু ৫৭৫ জনের। ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত ৫৩ হাজার ১৯৩, মৃত্যু ২২৪ জনের। বয়স অনুযায়ী দেখা গেছে, এ বছর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা। সংখ্যাটি সাড়ে ৯ হাজার ছাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বয়সসীমার মানুষ কর্মজীবী ও বেশি চলাফেরা করেন, তাই তারা মশার বেশি সংস্পর্শে আসছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে থেমে থেমে বৃষ্টি এখনো হচ্ছে। যতদিন বৃষ্টি থাকবে, ততদিন ডেঙ্গুর ঝুঁকি থাকবেই। কারণ জমা পানিতে এডিস মশার লার্ভা জন্মায়।’ তিনি বলেন, ‘গত বছরও অক্টোবর-নভেম্বরে পরিস্থিতি ভয়াবহ ছিল। এ বছরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন। আগামী তিন মাস পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। তাই জরুরি ভিত্তিতে মশা নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় জোর দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাসাবাড়িতে ফুলের টব বা কোনো পাত্রে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে নজর দিতে হবে।’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, ‘সব জ্বরের রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে এসে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে। ডেঙ্গু ধরা পড়লে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। অনেকেই দেরি করে হাসপাতালে আসছেন, এতে চিকিৎসা জটিল হয়ে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘অল্প অবহেলাতেও বড় ক্ষতি হতে পারে।’ সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুহীন একটি দিন পার হয়েছে; কিন্তু ওই দিনও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩০৮ জন। এ পর্যন্ত চলতি বছর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৩ হাজার ১৯৩ জন। মৃত্যু হয়েছে ২২৪ জনের। গতকালের ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ঢাকা মহানগরের ৮৭ জন, বরিশালের (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১১৫, চট্টগ্রামের ৮৫, ময়মনসিংহের ২১ জন। ২০২৫ সালে ডেঙ্গুতে মৃত ২২৪ জনের মধ্যে ১১৭ জন পুরুষ ও ১০৭ জন নারী। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মোট রোগীদের মধ্যে ৬১ দশমিক ১ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৮ দশমিক ৯ শতাংশ নারী।