সত্যের পক্ষে দুগ্ধপোষ্য শিশুর সাক্ষ্য

১১ অক্টোবর, ২০২৫ | ৭:১৮ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

মানুষ প্রায়ই বাহ্যিক চাকচিক্য ও সামাজিক মর্যাদাকে সাফল্যের মানদণ্ড হিসেবে ধরে নেয়। আমরা যাকে সম্মান করি, সে আদৌ সত্যের পথে আছে কি না, তা অনেক সময় বিবেচনায় আনি না। আবার যাকে অবমাননা করি, সে হয়তো আল্লাহর কাছে মর্যাদাবান। এই ভ্রান্ত ধারণার সংশোধনেই মহানবী (সা.) এক আশ্চর্য ঘটনার মাধ্যমে আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে একদা একজন মহিলা তার কোলের শিশুকে দুধ পান করাচ্ছিলো। এমন সময় একজন ঘোড়সওয়ার তাদের নিকট দিয়ে গমন করে। মহিলাটি বললো, হে আল্লাহ! আমার ছেলেটিকে এই অশ্বারোহীর মতো না বানিয়ে মৃত্যু দিয়ো না। তখন কোলের শিশুটি বলে উঠল, হে আল্লাহ! আমাকে ঐ অশ্বারোহীর মতো করো না। এই বলে পুনরায় সে দুধ পানে মনোনিবেশ করলো। তারপর একজন মহিলাকে কতিপয় লোক অপমানজনক ঠাট্টা বিদ্রূপ করতে করতে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছিল। ঐ মহিলাকে দেখে শিশুর মা বলে উঠলো, হে আল্লাহ! আমার পুত্রকে ঐ মহিলার মতো করো না। শিশুটি বলে উঠলো, হে আল্লাহ! আমাকে ঐ মহিলার ন্যায় করো। মহানবী (সা.) বলেন, ঐ অশ্বারোহী ব্যক্তি কাফির ছিলো। আর ঐ মহিলাকে লক্ষ্য করে লোকজন বলছিলো, তুই ব্যভিচারিণী, সে বলছিলো হাসবিয়াল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট। তারা বলছিলো তুই চোর, আর সে বলছিলো আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট। (বুখারি, হাদিস : ৩৪৬৬) এই হাদিসের ঘটনাটিতে প্রথম দৃশ্যে দেখা অশ্বারোহী ব্যক্তি বাহ্যিক দৃষ্টিতে সম্মানিত ও ক্ষমতাবান মনে হলেও, বাস্তবে সে ছিল জালিম ও কাফির। সে মানুষের ওপর অন্যায় করত, আল্লাহর বিধান অমান্য করত। তাই নবজাতক শিশুটি বলল, হে আল্লাহ! আমাকে তার মতো করো না'। অপরদিকে যে নারীকে সমাজ অপমান করছিল, সে ছিল প্রকৃত অর্থে নেককার ও ধৈর্যশীলা এক নারী। সে এসব অন্যায়ের কিছুই করেনি; বরং আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রেখে বলছিল, হাসবিয়াল্লাহু', আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট।' এখানে আল্লাহ তা’আলা নিজের কুদরতের মহিমা প্রদর্শন করেছেন এক নবজাতক শিশুর মাধ্যমে। ন্যায় ও জুলুমের মাঝে প্রকৃত পার্থক্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, বাহ্যিক চাকচিক্যের আড়ালে জুলুম লুকিয়ে থাকতে পারে, আর লাঞ্ছিত মানুষের ভেতরে লুকিয়ে থাকতে পারে ঈমানের আলো। তাই আল্লাহর কাছে নিজের ও নিজের সন্তানদের জন্য ঈমানের আলোয় আলোকিত হওয়ার দোয়া করা উচিত।