বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের তীব্র সংকট: বিশ্বব্যাংকের গভীর উদ্বেগ

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় থাকলেও বাংলাদেশের শ্রমবাজারে নেমেছে অস্বস্তিকর মেঘ। বিশ্বব্যাংক সতর্ক করে বলেছে, প্রবৃদ্ধি থাকলেও কর্মসংস্থান সঙ্কুচিত হচ্ছে, বিশেষ করে নারীদের অংশগ্রহণে দেখা যাচ্ছে বড় ধস। একই সঙ্গে দারিদ্র্যের হারও বেড়েছে। আজ ৭ই অক্টোবর, মঙ্গলবার ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ আপডেট’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে দেশের জাতীয় দারিদ্র্যের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১.২ শতাংশে, যা আগের অর্থবছরে ছিল ২০.৫ শতাংশ। অর্থাৎ, প্রবৃদ্ধি ধরে রাখলেও দারিদ্র্য কমছে না; বরং কর্মসংস্থান কমে যাওয়ায় সামাজিক বৈষম্যের ঝুঁকি আরও বাড়ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, কর্মসংস্থানের স্থবিরতা এখন বাংলাদেশের জন্য অন্যতম বড় নীতিগত সংকট। উৎপাদনমুখী খাতে তরুণ ও নারীদের অংশগ্রহণ না বাড়লে ভবিষ্যতে প্রবৃদ্ধি টেকসই রাখা কঠিন হবে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে দেশের শ্রমশক্তি অংশগ্রহণের হার ৬০.৯ শতাংশ থেকে কমে ৫৮.৯ শতাংশে নেমেছে। এ সময়ে নারীদের অংশগ্রহণই সবচেয়ে বেশি হ্রাস পেয়েছে। পাশাপাশি কর্মসংস্থান-জনসংখ্যা অনুপাতও ২.১ শতাংশ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫৬.৭ শতাংশে। অন্যদিকে, বেকারত্বের হার বেড়ে হয়েছে ৩.৭ শতাংশ। আরও উদ্বেগজনক তথ্য হলো—এ সময়ে প্রায় ৩০ লাখ কর্মক্ষম মানুষ শ্রমশক্তির বাইরে ছিলেন, যাদের মধ্যে ২৪ লাখই নারী। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, শিল্প ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি থাকলেও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না; বরং বিদ্যমান চাকরির সংখ্যা কমছে। সামগ্রিকভাবে গড়ে ২.৬ শতাংশ কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে, যার মধ্যে সেবা খাতের পতন সবচেয়ে বেশি। সংস্থাটি উল্লেখ করেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিল্প ও সেবা খাতে প্রবৃদ্ধির সঙ্গে চাকরির সরাসরি সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ, জিডিপি বাড়লেও সেই হারে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। কেবল কৃষি খাতে কিছুটা ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যেখানে তুলনামূলকভাবে বেশি শ্রমিক যুক্ত হয়েছেন। বিশ্বব্যাংক সতর্ক করেছে, যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকে, তবে বাংলাদেশের অর্থনীতি ‘চাকরিবিহীন প্রবৃদ্ধি’র (Jobless Growth) ফাঁদে পড়তে পারে—যেখানে অর্থনীতি এগোয়, কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবিকা উন্নত হয় না।