টানা ছুটিতে পর্যটনকেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড়

৩ অক্টোবর, ২০২৫ | ৮:১১ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

দুর্গাপূজা, সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটি মিলিয়ে টানা চার দিনের ছুটিতে সরগরম হয়ে উঠেছে দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্রগুলো। কক্সবাজার, কুয়াকাটা, সিলেট ও গাজীপুরের রিসোর্টগুলোতে নেমেছে পর্যটকের ঢল। আগাম বুকিং ছাড়া কোথাও মিলছে না হোটেল-রিসোর্টের কক্ষ। সমুদ্র, পাহাড় কিংবা সবুজ প্রকৃতির টানে মানুষ ছুটে গেছে শহরের কোলাহল ছাড়িয়ে নিরিবিলি গন্তব্যে। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ছুটিতে পর্যটকদের এমন সাড়া আগে খুব কমই দেখা গেছে। কক্সবাজার: হোটেল ভরতি, সৈকতে উপচে পড়া ভিড় পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই দীর্ঘ ছুটিতে কক্সবাজার সৈকত ও আশপাশের এলাকাজুড়ে নেমেছে পর্যটকের ঢল। হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টে কক্ষ পেতে অনেককে পড়তে হয়েছে বিড়ম্বনায়। মেরিন ড্রাইভ ঘিরে হিমছড়ি ঝরনা, ইনানী, প্যাঁচার দ্বীপসহ বিভিন্ন স্পটে ছিল ভিড়। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, টানা ছুটির কারণে শহরের প্রায় সব হোটেলই পূর্ণ হয়ে গেছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় ছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাড়তি নজরদারি। ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (এডিআইজি) আপেল মাহমুদ জানান, সৈকতে ৭৫ জন ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। অন্য দিকে পর্যটকের চাপ সামলাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে রেলওয়ে চালু করেছে বিশেষ ‘ট্যুরিস্ট এক্সপ্রেস’ ট্রেন। কুয়াকাটা: বৃষ্টি উপেক্ষা করেও লাখো পর্যটক উত্তাল সমুদ্র, ভারি বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়ার মাঝেও কুয়াকাটা সৈকতে ভিড় করেছে লাখো পর্যটক। গঙ্গামতী থেকে লেমপুর বন পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার সৈকতজুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। তিন শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের সব কক্ষই ছিল বুকিং। কক্ষ না পেয়ে অনেকে থাকতে বাধ্য হয়েছেন আশপাশের মহিপুর ও আলীপুর এলাকায়। খুলনা থেকে যাওয়া পর্যটক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, লাল কাঁকড়া, ঝাউবন, মন্দির—সবকিছু মিলিয়ে কুয়াকাটা অসাধারণ। হোটেল-মোটেল ওনারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল মোতালেব শরীফ জানান, শীত মৌসুমে আরও বেশি পর্যটক আসবে বলে তাদের প্রত্যাশা। সিলেট: ভোগান্তি থাকলেও আশাবাদী ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ ছুটিতে সিলেটের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে বেড়েছে পর্যটকের আনাগোনা। তবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বেহাল দশা ও ট্রেনের টিকিট সংকটে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে অনেককে। সাদাপাথর, ভোলাগঞ্জ, লালাখালসহ বিভিন্ন স্পটে পর্যটকের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ভোলাগঞ্জ পর্যটন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সফাত উল্লাহ বলেন, সাদাপাথরকাণ্ডের পর পর্যটন কিছুটা কমলেও এখন আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সিলেটের সভাপতি হুমায়ুন কবির লিটন জানান, আবহাওয়া বৈরী হলেও আমরা আশাবাদী। গাজীপুর: রিসোর্টে কক্ষ মেলেনি আগাম বুকিং ছাড়া ঢাকার পাশেই নিরিবিলি পরিবেশ ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধার কারণে গাজীপুরের রিসোর্টগুলোতেও ছিল পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়। সারা রিসোর্ট, নক্ষত্রবাড়ি, অরণ্যবাস, রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট, ভাওয়াল রিসোর্টসহ শতাধিক রিসোর্টে খালি কক্ষ পাওয়া যায়নি। সারা রিসোর্টের রিজার্ভেশন এক্সিকিউটিভ লাবিব হাসান জানান, তাদের কাপল রুমের ভাড়া ১৮ হাজার টাকা, সঙ্গে রয়েছে নানা সুবিধা। রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্টের ম্যানেজার আহাম্মদ হোসেন বলেন, আগাম বুকিং ছাড়া রুম না পেয়ে অনেকেই ফিরে গেছেন। উল্লেখ্য, টানা ছুটিতে দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড় পর্যটনশিল্পের জন্য ইতিবাচক সংকেত এনেছে। তবে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত না হলে এই ভ্রমণ আনন্দ অনেক সময় ভোগান্তিতে পরিণত হচ্ছে—এমন মন্তব্য করেছেন পর্যটক ও সংশ্লিষ্টরা।