রমজানে এতিমের পাশে দাঁড়ান

৭ এপ্রিল, ২০২৩ | ১০:১৬ অপরাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

অল্পবয়সে বাবা না থাকা প্রচণ্ড অসহায়ত্বের। যে অসহায়ত্বের পরিধির মাপ এতিমের জানা নেই। তার শুধু জানা আছে বাবা নেই, আর আছে ছোট-বড় বঞ্চনা। যে বঞ্চনা এতিমকে আরও বেশি সহায়হীন করে তোলে। বাবা না থাকায় এতিম স্নেহ, মায়া, ভালোবাসা এবং সুন্দরভাবে লালিত হওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। তাই তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা, স্নেহশীল হওয়া এবং তাদের যত্ন নেওয়া সকলের দায়িত্ব। মহান আল্লাহ এতিমের প্রতি কঠোর আচরণ করতে নিষেধ করে পবিত্র কোরআনে বলেন, আপনি এতিমের প্রতি কঠোর হবেন না। সুরা দোহা, আয়াত: ৯ রমজান মাসকে বলা হয় সহমর্মিতার মাস। আর সহমর্মিতা পাওয়ার সবচেয়ে বেশি হকদার হচ্ছে সমাজের এতিমদের। তাই রমজান মাসে তাদের প্রতি একটু বেশি যত্নবান হওয়া দরকার। হজরত রাসুল (সা.) এতিমের যত্ন নিতে, এতিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে, সর্বোপরি এতিমের প্রতিপালন করতে বলেছেন। আর এর বিনিময় হিসেবে দুনিয়ায় বহুবিদ কল্যাণ এবং পরকালে মহাসফলতার ঘোষণা করেছেন। এতিম অসহায়দের লালনপালনের ব্যয়ভার নেওয়া অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। এতে রিজিক প্রশস্ত হয়। রমজান মাসে তাদের লালনপালনের ব্যয়ভার নিলে অধিক সওয়াবের অধিকারী হওয়া যাবে। আর রিজিকে আসবে আরও প্রশস্ততা। হজরত আবু দারদা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, দুর্বল অসহায়দের আবেদনে তোমরা আমাকে সাহায্য করো। তোমাদের দুর্বল অসহায়দের কারণেই তোমরা সাহায্য ও রিজিকপ্রাপ্ত হও। আবু দাউদ ২৫৯৪ বক্রতা ও কঠোরতা খুবই খারপ গুণ হিসেবে গণ্য। এমন মানুষের হৃদয় হয় দয়াশূন্য। যাদের হৃদয়ে দয়া নেই মহান আল্লাহও তাদের প্রতি দয়া করেন না। রোজা রেখে বক্রতা ও কঠোরতা পরিহার করা আবশ্যক। অন্যথায় রোজার পরিপূর্ণ সওয়াব পাওয়া যাবে না। আর বক্রতা ও কঠোরতা দূর করার অন্যতম মাধ্যম হলো এতিম অসহায়ের খোঁজখবর নেওয়া। কেননা এতিম অসহায়ের খোঁজখবর নিলে, তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করলে এবং তাদেরকে খাবার খাওয়ালে অন্তরের বক্রতা ও কঠোরতা দূর হয়। এতে মনে ব্যাপক প্রশান্তি আসে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.) এর কাছে তার অন্তর কঠিন মর্মে অভিযোগ করল। রাসুল (সা.) তাকে বললেন, যদি তুমি তোমার অন্তর নরম করতে চাও তাহলে দরিদ্রকে খাবার খাওয়াও এবং এতিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দাও। মুসনাদে আহমাদ ২৩৮৭ নিজের আত্মীয়-স্বজনের মাঝে কোনো এতিম থাকলে তাদের খোঁজখবর ও যত্ন আরও ভালোভাবে নেওয়া উচিৎ। এতে দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়া যায়। আর রমজান মাস এমন মহৎ কাজের মোক্ষম সময়। তাই রমজানের বরকতময় এই সময়ে নিজের অসহায় আত্মীয়স্বজন ও এতিমদের পাশে দাঁড়ানো চাই। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, মিসকিনকে দান করায় একটি সওয়াব, আর আত্মীয়কে দান করায় দুইটি সওয়াব হাসিল হয়। একটি দানের সওয়াব এবং অপরটি আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার সওয়াব। নাসায়ী ২৫৮২ এতিমের যত্ন নেওয়া এবং এতিমকে লালনপালন করা জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, আমি ও এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এই দুই আঙুলের ন্যায় পাশাপাশি অবস্থান করব। অতঃপর রাসুল (সা.) তাঁর মধ্যমা ও বৃদ্ধা আঙুলকে কাছাকাছি করে দেখালেন। আবু দাউদ ৫১৫০ এই হাদিস দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয়, যে ব্যক্তি জান্নাতে রাসুল (সা.) এর সঙ্গে থাকতে চায় সে যেন এতিম প্রতিপালনে ব্রতী হয়। কারণ আখেরাতে এর চেয়ে উত্তম আর কোনো অবস্থান হতে পারে না। অসহায় মানুষের তালিকায় এতিম অন্যতম। বাবা হারিয়ে এতিম স্নেহহীন ও মায়াহীন হয়ে পড়ে। বাবার দরদমাখা হাত তার মাথায় আর পড়ে না। সে বঞ্চিত হয় অকৃত্রিম এই ভালোবাসা থেকে। যারা স্নেহভরা হাত অসহায় এতিমের মাথায় বুলাবে, ভালোবেসে এতিমকে কাছে টানবে, প্রচণ্ড মায়ায় প্রতিপালনের ভার নেবে তারা পরকালে প্রভুর পরম দয়ায় আবিষ্ট হবে। তাই আসুন সহমর্মিতার এই মাসে এতিমদের পাশে দাঁড়াই। তাদের মুখে হাসি ফোঁটাই।