আওয়ামী লিগের মিছিলে ভিড় বাড়ছে, গোয়েন্দা রিপোর্ট পেতেই গ্রেফতার শুরু, চ্যালেঞ্জ হাসিনার
গত ১২ মে থেকে আওয়ামী লিগের কার্যক্রম সরকারিভাবে নিষিদ্ধ। তার আগে থেকেই হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। হাসিনা-সহ শীর্ষ নেতারা বেশিরভাগই বিদেশে।
বাংলাদেশে আওয়ামী লিগের (Awami League) নেতা-কর্মীদের গণ-গ্রেফতার (Mass Arrest) অভিযান শুরু হয়েছে। পুলিশ, সেনাবাহিনী, সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি-সহ দেশের সব নিরাপত্তা বাহিনীকে এই কাজে নামানো হয়েছে। প্রতিটি জেলায় তৈরি হয়েছে বিশেষ টিম। পুলিশ সদর থেকে থানাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আওয়ামী লিগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলির নেতা-কর্মীদের প্রকাশ্যে দেখলেই আইনি পদক্ষেপ করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনাও দলকে বার্তা দিয়েছেন। তিনি ইউনুস প্রশাসনকে (Yunus) পাল্টা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছেন, কত গ্রেফতার করবে। জেলের প্রাচীর একটা সময় ভেঙে পড়বেই। হাসিনা বলেছেন, ইতিহাস বলছে আওয়ামী লিগকে কখনও কারাগারে আটকে রাখা যায়নি। তিনি পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, কাউকে ছাড়া হবে না। আজ যারা যেভাবে আওয়ামী লিগের নেতাকর্মীদের উপর নিপীড়ন, নির্যাতন করছেন, একদিন তাঁদেরও একই পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে। ঢাকা-সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় হালে আওয়ামী লিগের মিটিং-মিছিলে ভাল ভিড় হচ্ছে। গ্রেফতারের ভয় উপেক্ষা করে ঘরে বসে থাকা নেতা-কর্মীরা রাজপথে সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। দিন কয়েক আগে ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় হাসিনার দলের একটি মিছিলের পর গোয়েন্দারা সরকারকে সতর্কবার্তা দিয়েছে। দীর্ঘ পথ পরিক্রমা করা ওই মিছিলে প্রায় পঞ্চাশ হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থক শামিল হয়েছিলেন বলে খবর। জানা গিয়েছে, শুধু ঢাকা নয়, দেশের অন্যান্য জেলা, উপজেলাতেও আওয়ামী লিগের মিছিল, সমাবেশে ভিড় বাড়ছে বলে সরকারকে রিপোর্ট দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। তারপর থেকেই সরকারি মহল এবং বিএনপি-জামাত-এনসিপি-র নেতারা প্রচার শুরু করেছেন, আওয়ামী লিগ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে বড় ছক কষেছে। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, ভারত সরকারের সহায়তায় দিল্লিতে বসে ভোট বানচালের ষড়যন্ত্র করছেন শেখ হাসিনা। এরপরই নতুন করে গ্রেফতারি শুরুর নির্দেশ গিয়েছে থানাগুলিতে। সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার আবদুল কুদ্দুশ চৌধুরী রবিবার জেলার সব থানার অফিসারদের ডেকে বৈঠক করে। মৌখিক নির্দেশের পর থানাগুলিতে পাঠানো লিখিত নির্দেশিকায় বলা হয়, আওয়ামী লিগের নেতা-কর্মীদের প্রকাশ্যে দেখা গেলেই আইননানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। গত ১২ মে থেকে আওয়ামী লিগের কার্যক্রম সরকারিভাবে নিষিদ্ধ। তার আগে থেকেই হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। হাসিনা-সহ শীর্ষ নেতারা বেশিরভাগই বিদেশে। তারপরও মাত্র তেরো মাসে আওয়ামী লিগের মাঠে-ময়দানে তুমুলভাবে ফিরে আসায় সরকারি শিবির বিস্মিত। গত মাসে নিরাপত্তা আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস এই ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ করে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সংশয় ব্যক্ত করেন। অন্যদিকে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আঙুল তোলেন বিচারালয়ের দিকে। তিনি বলেন, বিচারকদের বেশিরভাগ ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর। তাঁরা আওয়ামী লিগের নেতা-কর্মীদের জামিন দিয়ে দিচ্ছেন। সেই নেতারা এলাকায় ফিরে মানুষকে ভয় দেখাচ্ছে। দলতে সংঘঠিত করছে। আওয়ামী লিগ সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, গত এক সপ্তাহে প্রায় পাঁচ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার ন্ত্রাস দমন আইনে আওয়ামী লিগের সাবেক দুজন সংসদ সদস্যসহ ১৩ নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ধৃতদের মধ্যে আছেন আওয়ামী লিগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক তামান্না নুসরাতও। পুলিশের অভিযোগ, তামান্না নুসরাত অনলাইনে তৃণমূল কর্মীদের সংগঠিত করার লক্ষ্যে ‘শেখ হাসিনা তৃণমূল সংগ্রামী লিগ’ নামে সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছিলেন। তিনি একাধিক ঝটিকা মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশ পুলিশ গত সপ্তাহে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে জানায়, গত বছর ৫ অগস্ট অর্থাৎ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে চলতি বছরের ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪৭ হাজার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লিগের নেতা-কর্মী বলে পুলিশেরই একাংশ জানিয়েছে। শেখ হাসিনার পার্টি অবশ্য দাবি করছে, ৫ অগস্টের পর দেড় লাখের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মানবাধিকার সংগঠনগুলির ভয়ে পুলিশ গ্রেফতারির সংখ্যা কমিয়ে দেখাচ্ছে। অনেককেই আদালতে পেশ না করে গোপন স্থানে আটকে রাখা হয়। মারধর এবং অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করিয়ে তারপর মুক্তি দেওয়া হয় তাদের। অনেককে তুলে নিয়ে গিয়ে আওয়ামী লিগেরই নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করানো হয়েছে।
