গাজায় যুদ্ধের অবসানে ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর যৌথ পরিকল্পনা: হামাসের সম্মতির অপেক্ষায় শান্তির সম্ভাবনা

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ৮:৩৫ অপরাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

ওয়াশিংটন, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু ২৯ সেপ্টেম্বর হোয়াই হাউজে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ২০-দফা (কিছু সূত্রে ২১-দফা) পরিকল্পনা ঘোষণা করে গাজায় চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই পরিকল্পনায় হামাসকে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সকল জিম্মি (জীবিত ও মৃত) মুক্তির দাবি করা হয়েছে, যার বিনিময়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ধাপে ধাপে গাজা থেকে প্রত্যাহার এবং বিস্তৃত মানবিক সাহায্যের ব্যবস্থা রয়েছে। ট্রাম্প এটিকে “মধ্যপ্রাচ্যে চিরস্থায়ী শান্তির” পথ বলে অভিহিত করলেও, হামাস এখনও লিখিত প্রস্তাব না পাওয়ার কথা জানিয়ে সম্মতির কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। নেতানিয়াহু বলেছেন, যদি হামাস প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে ইসরায়েল “কাজ শেষ” করবে। পরিকল্পনার মূল উপাদান: যুদ্ধবিরতি থেকে পুনর্নির্মাণ: হোয়াইট হাউজ কর্তৃক প্রকাশিত “গাজা সংঘাতের চূড়ান্ত পরিকল্পনা”তে ২০টি শর্ত রয়েছে, যা যুদ্ধবিরতি, জিম্মি মুক্তি এবং গাজার ভবিষ্যৎ শাসনের কাঠামো নির্ধারণ করে। প্রধান শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে:জিম্মি মুক্তি: হামাসকে ৪৮ জন জিম্মির (যার মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা) মুক্তি দিতে হবে ৪৮-৭২ ঘণ্টার মধ্যে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে, কিন্তু নিরাপত্তা পেরিমিটারে থাকবে। গাজার অস্ত্রমুক্তকরণ: আরব ও মুসলিম দেশগুলোর প্রতিশ্রুতিতে গাজাকে সম্পূর্ণ অস্ত্রমুক্ত করা হবে। হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ করতে হবে, এবং কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠী গাজায় কার্যকর থাকতে পারবে না। প্রশাসনিক কাঠামো: যুদ্ধোত্তর গাজায় একটি অস্থায়ী “Board of Peace” গঠন করা হবে, যার নেতৃত্বে থাকবেন ট্রাম্প এবং প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। এটি “প্রযুক্তিগত” কমিটি হিসেবে কাজ করবে, যাতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (PA) কোনো ভূমিকা না থাকে যতক্ষণ না তারা “মৌলিক পরিবর্তন” করে। হামাস বা PA-এর কোনো ভূমিকা থাকবে না। মানবিক সাহায্য ও পুনর্নির্মাণ: যুদ্ধবিরতির পরপরই জাতিসংঘ এবং Red Crescent-এর মাধ্যমে সাহায্য প্রবেশের ব্যবস্থা। Rafah crossing উভয় দিকে খোলা হবে, এবং অবকাঠামো (জল, বিদ্যুৎ, হাসপাতাল) পুনর্নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির কোনো স্থান নেই, এবং যারা চাইলে দুই বছর পর ফিরে আসার অধিকার রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী শান্তি: এই চুক্তি Abraham Accords-এর সম্প্রসারণের পথ প্রশস্ত করবে, যাতে আরও আরব দেশ ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি পশ্চিম তীরে সম্প্রসারণের অনুমতি দেবেন না। ট্রাম্প বলেন, “আজ মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। আমরা ‘শান্তির মাধ্যমে শক্তি’ নীতিতে বিশ্বাসী।” নেতানিয়াহু যোগ করেন, “এটি আমাদের যুদ্ধের সকল লক্ষ্য অর্জন করবে—হামাসকে নিরস্ত্র করে গাজাকে কখনও হুমকির মুখ থেকে রক্ষা করা।” এই ঘোষণার পটভূমিতে রয়েছে গাজায় প্রায় দু’বছরের যুদ্ধ, যা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলা থেকে শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪০,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি এবং ১,২০০-এর বেশি ইসরায়েলি নিহত হয়েছে, এবং গাজার অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। ট্রাম্প গত সপ্তাহে United Nations General Assembly-তে আরব নেতাদের সাথে আলোচনা করে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। নেতানিয়াহুর ডানপন্থী কোঅ্যালিশনের অভ্যন্তরীণ চাপ সত্ত্বেও তিনি এটি গ্রহণ করেছেন, যদিও তিনি UN-এ বলেছেন, “হামাসকে ধ্বংস না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে।” সম্প্রতি ইসরায়েলের কাতার-এ হামাস নেতাদের উপর হামলায় একজন কাতারি সৈনিক নিহত হলে উত্তেজনা বাড়ে। নেতানিয়াহু কাতার-এর প্রধানমন্ত্রীর সাথে ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ফোনে কথা বলে “গভীর অনুশোচনা” প্রকাশ করেন এবং বলেন, “এটি হামাসের লক্ষ্য ছিল, কাতার নয়।” হামাসের একজন কর্মকর্তা মাহমুদ মারদাউই বলেছেন, “আমরা লিখিত প্রস্তাব পাইনি, এবং আমরা নিরস্ত্র হব না।” ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ভূমিকা না থাকায় প্যালেস্টাইনের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া এসেছে, যারা এটিকে “ফিলিস্তিনিদের অধিকার লঙ্ঘন” বলে অভিহিত করেছে। আন্তর্জাতিকভাবে, জাতিসংঘ এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এই প্রক্রিয়াকে সমর্থন করেছে, কিন্তু সতর্ক করেছে যে “জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি” এড়াতে হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, হামাসের সম্মতি ছাড়া এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে না, এবং ট্রাম্পের চাপ নেতানিয়াহুর জোটকে অস্থিতিশীল করতে পারে। এই পরিকল্পনা যদি সফল হয়, তাহলে এটি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন যুগের সূচনা করতে পারে, যেমন Abraham Accords-এর সম্প্রসারণ। কিন্তু গাজায় চলমান ইসরায়েলি অভিযান এবং হামাসের প্রতিরোধ এই প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছে। ট্রাম্প বলেছেন, “আমরা খুব কাছাকাছি, কিন্তু হামাসকে সম্মতি দিতে হবে।” নেতানিয়াহু যোগ করেছেন, “এটি অক্টোবর ৭-এর মতো আর কোনো হামলা প্রতিরোধ করবে।” যাইহোক, এই ঘোষণা গাজার যুদ্ধপীড়িত জনগণের জন্য আশার আলো জ্বালিয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নেতাদের উপর এখন নির্ভর করছে এই পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ নেবে কি না।