শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে

আজ ২৮ সেপ্টেম্বর, জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন। এদিনটি নিছক কোনো রাজনৈতিক নেত্রীর জন্মবার্ষিকী নয়; এটি বাংলাদেশের কোটি সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের সংগ্রামের প্রতীক, দুঃখ–কষ্ট পেরিয়ে উন্নয়নের আলোকিত আভায় একটি দেশ গড়ার প্রত্যয়ে নিবেদিত প্রাণ একজন অদম্য মানবীর জন্মদিন। তিনি আর কেউ নন, তিনি বাঙালি জাতির পিতা, বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান’র আত্মজা। যখন ১৯৭৫’র ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও পরিবারের সকল সদস্যকে পিশাচেরা নৃশংসভাবে হত্যা করে শেখ হাসিনা তখন একমাত্র বোনকে নিয়ে প্রবাসে। হঠাৎ এমন এক হৃদয়বিদারক নৃশংস হত্যা ও ছোট বোন ছাড়া পরিবাবের সবাইকে হারিয়ে বাঙালির অত্যন্ত আপন শেখ হাসিনা, হাসু হতবিহবল হয়ে পড়েন। কিন্তু ভেঙ্গে পড়েননি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার অব্যহতি পরে বঙ্গবন্ধুর সারাজীবনের প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতায় গড়া বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এসময় শেখ হাসিনাকে দুঃসাহসিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ সামলাতে হয়েছিল, যা পরবর্তী সময়ে তাঁর নেতৃত্বকে আরও দৃঢ় করে তুলেছিল। এরপর ১৯৮১ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন, দেশে ফিরে আসেন এবং আওয়ামীলীগকে পুনর্গঠন ও সংগ্রামের পথে পরিচালিত করেন। দীর্ঘ সংগ্রাম, ত্যাগ ও তিতিক্ষার পর তাঁর নেতৃত্বে পঁচাত্তরের পরে প্রথমবার ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েই তিনি ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্তির প্রতিজ্ঞাকে দৃঢ়তার সাথে গ্রহন করেন। শেখ হাসিনার রাজনীতির মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল গ্রামের, খেটে খাওয়া মানুষের স্বপ্নপূরণ। তিনি কেবল দেশের অর্থনীতিকে একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাননি, বরং সেই অর্থনীতির সুফল যেন একেবারে প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছায়, সেই ব্যবস্থাই করেছেন। একটি সময় দেশের দারিদ্র্যের হার ছিল প্রায় ৬০ শতাংশ। ১৯৯৬ ও পরবর্তীতে তাঁর ধারাবাহিক নেতৃতে বাংলাদেশের দারিদ্রের হার ১৮ শতাংশের ঘরে নেমে আসে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ দারিদ্র মোচনে অনন্য ভুমিকা পালন করে। এই সংখ্যাটি সামান্য নয়; এর মানে হলো, কোটি কোটি মানুষ আজ চরম দারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে মুক্তি পেয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্প তাঁর সবচেয়ে মানবিক উদ্যোগগুলোর একটি। লক্ষ লক্ষ গৃহহীন পরিবার ঘর ও জমি পেয়েছে। এই মানবিক সংস্কার আশ্রয়হীনদের শুধু নিরাপত্তাই দেয়নি, দিয়েছে আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাস। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা—এসব সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রামীণ মানুষের জীবনে এনেছে স্থায়ী স্বস্তি ও সামাজিক ন্যায্যতা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে পরিচিত হয়েছিল “উন্নয়নের রোল মডেল” হিসেবে। তাঁর সময়ে মাথাপিছু আয় বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে যা ভারতকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিলো। তাঁর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। শেখ হাসিনার অদম্য প্রত্যয়ের কারনে আজ প্রায় প্রতিটি পরিবার বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত, যা গ্রামীণ অর্থনীতি ও শিক্ষার পরিবেশে নতুন গতি এনেছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রাক্কালে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন প্রত্যাহার করলে অনেকে ভেবেছিলেন প্রকল্পটি থেমে যাবে। কিন্তু শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে প্রমাণ করেছেন বাংলাদেশ পারে, বাংলাদেশ স্বনির্ভর। এটি জাতীয় আত্মমর্যাদার প্রতীক। সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় শেখ হাসিনা এনেছিলেন এই অবিশ্বাস্য বিপ্লব। মেট্রোরেল, এক্সপ্রেস ওয়ে, সারাদেশে সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন এমন অসংখ্য উন্নয়ন বাংলাদেশকে আধুনিক বিশ্বের একটি আধুনিক রাস্ট্রের সাড়িতে দাঁড়াবার সুযোগ করে দিয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাস্থ্যখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটিয়েছে। গ্রাম পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক পুনঃপ্রবর্তন ও সম্প্রসারণ শেখ হাসিনার করা স্বাস্থ্যসেবার অন্যতম বড় উদ্যোগ। ১৯৯৮ সালে তিনি এই প্রকল্প চালু করেন। আজ দেশে প্রায় ১৪,০০০-এর বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যকর রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। মাতৃমৃত্যু হার ২০০০ সালে প্রতি লাখে ৪৮৮ জন থেকে কমে এসে বর্তমানে প্রায় ১৬১ জনে দাঁড়িয়েছে (UNFPA, WHO )। শিশুমৃত্যু হারও উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে; বর্তমানে প্রতি হাজারে শিশু মৃত্যুর হার ২১-এর নিচে নেমে এসেছে। কোভিড-১৯ মহামারির সময় বাংলাদেশ ৩০ কোটির বেশি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করে, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম বড় সাফল্য। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ রূপকল্পের মাধ্যমে শেখ হাসিনা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি আধুনিক ভিত্তি গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছিল । এর ফলেই আজ শহরের বাইরে গ্রামের মানুষও ঘরে বসে সরকারি সেবা পাচ্ছে, ফ্রিল্যান্সাররা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে,ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনের কারনের যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন এবং তরুণ প্রজন্ম প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এই সফলতাকে আরো এগিয়ে নিতে তিনি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। শেখ হাসিনা লক্ষ্য স্থির করেছিলেন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার। তথ্য ও উপাত্ত দিয়ে শেখ হাসিনার কর্মযজ্ঞকে বিচার করতে গেলে দেখা যায়, সংখ্যাগুলো এখানে শুধু পরিসংখ্যান নয়, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের লালন করা অভিপ্রায়, আশা আর স্বপ্নের বাস্তবায়ন। বাংলাদেশ আজ এক জটিল রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। গতবছর ৫ আগস্ট দেশী ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে নেমে এসেছে চরম অরাজকতা। ডঃ মুহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অবৈধ অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশে অগণতান্ত্রিক, জুলুম আর মব সন্ত্রাসের রাজত্ব পরিচালিত করছেন। শেখ হাসিনার সময়ের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বন্ধ হয়ে গেছে, মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব হয়েছে এবং জাতির ভবিষ্যৎ এক অনিশ্চিত অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে। অর্থনৈতিক চিত্র আরও উদ্বেগজনক। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেখানে বাংলাদেশ ৬–৭% প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছিল, বিদেশি রিজার্ভ এক সময় ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল, দারিদ্র্যের হার নেমেছিল ১৯ শতাংশের নিচে, আজ সেই সব অর্জন ফিকে হয়ে গেছে। টাকার মান কমেছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের জীবনকে অসহনীয় করে তুলেছে। প্রতিক্রিয়াশীল ও মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি জোট বেঁধেছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান ও মূলনীতিকে রোধ করতে। স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার, নির্যাতন, বাড়িঘর থেকে বিতারিত ও দমননীতির শিকার হতে হয়েছে। বিরোধী মত দমন, সংবাদমাধ্যমে সেন্সরশিপ আর বিচার বহির্ভূত হত্যার কারণে গণতন্ত্র কার্যত স্থবির। রাজনৈতিকভাবে শূন্য এক বাংলাদেশকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করছে ধর্মীয় উগ্রবাদী ও ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী। হিন্দু ও ভিন্ন ধর্ম ও মতের মানুষের প্রতি অপরিসীম নির্যাতন ও দমন নিত্যদিনের ঘটনা। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতও ধসের মুখে। শেখ হাসিনার গড়া একসময়ের সফল “কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল”, বিনামূল্যের পাঠ্যবই, উপবৃত্তি কর্মসূচি আজ ভেঙে পড়েছে। উগ্র ছাত্র-রাজনীতি ও বাজেট সংকোচন শিক্ষার গুণগত মানকে বিপন্ন করেছে। স্বাস্থ্যসেবা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। শুধু উন্নয়নের ধারাবাহিকতাই নয়, স্থিতিশীলতা, প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা এবং গণতান্ত্রিক শাসনের জন্যও শেখ হাসিনার মতো দূরদর্শী নেতৃত্বের কোন বিকল্প নেই। তিনি শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা নন, বরং জাতির অগ্রযাত্রার দিশারী। বাংলাদেশের বর্তমান মহাসঙ্কট নিরসনের জন্য শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন জরুরি। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবন উৎসর্গ করেছিলেন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মঙ্গলের জন্য। ষড়যন্ত্রকারীদের অশুভ ছক ব্যর্থ করতে তাই দেশের সাধারণ জনগণ তথা তৃণমূল এক বলিষ্ঠ প্রত্যয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তাদের সমবেত আকাঙ্ক্ষার সম্মিলিত শ্লোগান “শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে”। শুভ জন্মদিন, বাংলাদেশের বাতিঘর আমাদের শ্রদ্ধার “শেখের বেটি”! জয় বাংলা।