বিচার বিভাগের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ?

এফবিআইয়ের সাবেক পরিচালক জেমস কোমির বিরুদ্ধে কংগ্রেসে মিথ্যা বিবৃতি দেওয়ার একটি অভিযোগ এবং আরেকটি ন্যায়বিচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। বিচার বিভাগ কোমির বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ বিবেচনা করতে গ্র্যান্ড জুরির কাছে অনুরোধ করেছিল, কিন্তু আদালতে মামলা চলার জন্য কেবল দুটি অভিযোগের পক্ষে পর্যাপ্ত প্রমাণ রয়েছে বলে জুরিরা একমত হতে পেরেছে। তৃতীয়টিও ছিল মিথ্যা বিবৃতি দেওয়ার আরেকটি অভিযোগ। ২৫ অক্টোবর এই অভিযোগ গঠনের পর মার্কিন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা/ন্যায়-নিষ্ঠতা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আক্রোশের কাছে পরাস্থ হয়েছে বলে শীর্ষস্থানীয় সকল গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে। কারণ, দীর্ঘদিন থেকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এফবিআইয়ের সাবেক এই প্রধানকে শায়েস্তার কথা বলে আসছিলেন। একইসাথে ট্রাম্প তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শায়েস্তার কথাও বারংবার বলে আসছেন। ভার্জিনিয়ার একটি ফেডারেল গ্র্যান্ড জুরিদের গঠিত অভিযোগ, জেমস কোমি ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কংগ্রেসে দেওয়া তার সাক্ষ্যে- সংবাদমাধ্যমকে শ্রেণিবদ্ধ তথ্য ফাঁস করার অনুমোদন দিয়েছিলেন কি না, সে বিষয়ে মিথ্যা বলেছেন। এ তদন্তের নেতৃত্ব দিচ্ছেন লিন্ডসে হ্যালিগান, যিনি পূর্ব ভার্জিনিয়ার স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেল এবং একসময় ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আইনজীবী ছিলেন। অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় কোমি বৃহস্পতিবার ইনস্টাগ্রামে এক মিনিটের ভিডিওতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, “আমি ফেডারেল বিচার ব্যবস্থার উপর পূর্ণ আস্থা রাখি।” যে কোন সময় কোমি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। জানা গেছে, কোমির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উপস্থাপন করা হবে ৯ অক্টোবর সকাল ১০টায় ভার্জিনিয়ার আলেকজান্দ্রিয়া ফেডারেল কোর্টে। ট্রাম্পের অ্যাটর্নি জেনারেল তথা আইনমন্ত্রী পাম বন্ডি এক বিবৃতিতে বলেছেন, যারা আমেরিকার জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার করে, তাদের জবাবদিহিতায় যে অঙ্গীকার রয়েছে বিচার বিভাগের- এই অভিযোগ গঠন তারই প্রতিফলন। কোমি হচ্ছেন প্রথম কোনো সাবেক এফবিআই পরিচালক, যার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক অভিযোগ আনা হয়েছে। কোমি সবসময়ই বলে আসছেন, তিনি শপথভঙ্গ করেননি। যদি দোষী প্রমাণিত হন, তাহলে তার সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড হতে পারে। কোমির একজন আইনজীবী প্যাট্রিক ফিটজেরাল্ড সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলেছেন, “জিম কোমি আজ (২৫ সেপ্টেম্বর) দায়ের হওয়া অভিযোগগুলো পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। আমরা আদালত কক্ষে তার নির্দোষিতা প্রমাণের অপেক্ষায় আছি।” ভিডিও বার্তায় কোমি বলেন, “আমার পরিবার এবং আমি বহু বছর ধরে জানি যে ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর একটা মূল্য দিতে হবে। আমরা কখনো মাথা নিচু করে বাঁচব না, আপনাদেরও উচিত না। এবং আমি নির্দোষ। চলুন তাহলে আদালতে দেখা হোক।” এদিকে, শশুরের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উত্থাপনের পরই জেমস কোমির জামাতা টরি এ এডোয়ার্ডস জুনিয়র ভার্জিনিয়াস্থ ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট ফেডারেল কোর্টের সহকারি প্রসিকিউটরের পদ ত্যাগের নোটিশ দিয়েছেন স্টেট এটর্নী জেনারেলের নিকট। সহকারি এটর্নী হিসেবে দায়িত্ব পালনের যে শপথ নিয়েছেন তা সমুন্নত রাখতে পদত্যাগের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন একটি মাত্র বাক্যে লেখা ঐ পদত্যাগ পত্রে। উল্লেখ্য, একই আদালতের জুরিরা তার শশুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, চলতি গ্রীস্মেই কোমির কন্যা মৌরিন কোমিকে ম্যানহাটান ফেডারেল কোর্টের এটর্নী থেকে বরখাস্ত করা হয়। সেই বরখাস্তের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে মৌরিন বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মৌরিন উল্লেখ করেছেন যে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়নভাবে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় এ অভিযোগ উপস্থাপনের পর বিশ্বখ্যাত নিউইয়র্ক টাইমস মন্তব্য করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের স্বাধীনভাবে কাজের দীর্ঘ ঐতিহ্যকে ম্লান করলো । ট্রাম্পের কারণে বিচার বিভাগও এখোন হোয়াইট হাউজের ক্রীড়নকে পরিণত হতে চলেছে বলে পত্রিকাটি উল্লেখ করেছে। ক্ষমতার অপব্যবহারের এই নজির কারো জন্যেই মঙ্গলজনক নয় বলেও মন্তব্য করছেন সিএনএন-সহ বিভিন্ন টক শো’র অতিথিরা।