চট্টগ্রামে ২টিসহ নাসা গ্রুপের ১৮টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ, কর্মহীন হাজার হাজার শ্রমিক

মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল হাজার হাজার শ্রমিক এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল লক্ষাধিক মানুষের। বকেয়া বেতনের দাবিতে উত্তাল আন্দোলন নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রামে ইপিজেডে ২টি কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার একদিন পরেই আশুলিয়ায় নাসা গ্রুপের অধীনস্থ আরও ১৬টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। আজ বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হওয়া এই বন্ধের সিদ্ধান্তে ১৮টি কারখানার হাজার হাজার শ্রমিক ও তাদের ওপর নির্ভরশীল পরিবারের লক্ষাধিক মানুষের জীবন পুরোপুরি অনিশ্চয়তার মাঝে পড়ল। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এমন সংকটে যে, এই কর্মহীন শ্রমিকরা অন্য কোনো কারখানায় কাজ পাবেন বলেও নিশ্চয়তা নেই। এর আগে বিভিন্ন সময়ে অস্থায়ীভাবে বন্ধ রাখার পর এবার স্থায়ী বন্ধের ঘোষণা এলো। কারখানা হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা গতকাল থেকে বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে সড়কে নেমে বিক্ষোভ করছেন। সকাল থেকে শত শত শ্রমিক বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করলে দু’পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, আগস্ট মাসের বেতনসহ তাদের সব পাওনা এখনো পরিশোধ করেনি কর্তৃপক্ষ। হঠাৎ করে কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই কারখানা বন্ধ করে দেওয়ায় তারা মানবেতর পরিস্থিতিতে পড়েছেন। শ্রমিকরা অবিলম্বে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ এবং কারখানা পুনরায় চালুর দাবি জানান। বিক্ষোভ চলাকালে শ্রমিকরা ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, জলকামান ও লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে চার পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন। শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোমিনুল ইসলাম ভুঁইয়া জানান, শ্রমিকদের অবরোধের কারণে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। প্রথমে শান্তিপূর্ণভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও শ্রমিকরা সরে না গেলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরে আয়োজিত ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে নাসা কর্তৃপক্ষ জানায়, বিদ্যুৎ-গ্যাসসংকট ও পর্যাপ্ত ক্রয়াদেশ না থাকায় ২৫শে সেপ্টেম্বর থেকে সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। সেখানে শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়—আগস্ট মাসের বেতন ১৫ই অক্টোবরের মধ্যে, সেপ্টেম্বরের বেতন ৩০শে অক্টোবরের মধ্যে এবং অন্যান্য পাওনা ৩০শে নভেম্বরের মধ্যে দেওয়া হবে। তবে শ্রমিকদের অভিযোগ, পাওনা মেটানোর আশ্বাস দিলেও কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়ায় তাঁরা ভবিষ্যৎ নিয়ে দিশাহারা। শুধু নাসা বেসিক, নাসা গ্লোবাল ও নাসা হাই-টেক নামের তিন কারখানাতেই প্রায় ২৭ হাজার শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। এতে পুরো শিল্পাঞ্চলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। উল্লেখ্য, গত বছরের ২রা অক্টোবর নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই কারখানাগুলোর বেতন-ভাতা অনিয়মিত হয়ে পড়ে। দফায় দফায় নোটিশ দিয়ে বন্ধ রাখার পর শেষ পর্যন্ত স্থায়ীভাবে উৎপাদন বন্ধের সিদ্ধান্ত জানাল কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের জন্য সম্পত্তি বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হলেও এ সময়েই স্থায়ী বন্ধের ঘোষণা আসায় শ্রমিকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। বর্তমানে শ্রমিকদের বিক্ষোভ ঠেকাতে এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে শিল্পাঞ্চলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগে, গতকাল ২৪শে সেপ্টেম্বর, বুধবার বিক্ষোভ করেন বন্ধ হয়ে যাওয়া নাসা গ্রুপের দুটি কারখানার হাজার হাজার শ্রমিক। সকাল ৯টা থেকে তারা চট্টগ্রামের ফ্রি-পোর্ট এলাকার বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করেন। এতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। তুমুল ভোগান্তিতে পড়েন এই সড়ক ব্যবহারকারী সাধারণ মানুষ। জানা গেছে, সিইপিজেডের নাসা গ্রুপের দুটি কারখানায় কাজ করেন প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক। অক্টোবর থেকে কারখানা দুটি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন মালিকপক্ষ। এতে শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভে নেমে পড়েছেন। শ্রমিকরা বলেন, আমাদের দুটি কারখানার শ্রমিকদের কয়েক মাসের বেতন বকেয়া। সেই বেতন না নিয়ে উল্টো কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয়। এতগুলো শ্রমিক আমরা কোথায় যাবো। বকেয়া বেতন পেলে কিছুটা স্বস্তি হতো৷ কিন্তু সেটিও দিচ্ছে না। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানার সামনে জড়ো হয়ে ‘শ্রমিক ঠকানো কালো চুক্তি মানি না, মানব না’, ‘শ্রমিকের রক্ত চুষে খেতে দেবো না’ … ইত্যাদি স্লোগান দেন।