শেখ হাসিনার সরকারের মজুদকৃত চালের বস্তা থেকে তাঁরই নাম মুছে চলছে বিতরণ

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের মজুদকৃত বিপুল পরিমাণ চাল এখনো রয়ে গেছে খাদ্যগুদামে। হতদরিদ্ররা সেই চাল এখনো পেয়ে যাচ্ছেন। তবে মজুদকৃত চালের বস্তায় শেখ হাসিনার নাম মুদ্রিত দেখে দেশের বিভিন্ন স্থানের সরকারি কর্মকর্তারা বিব্রতবোধ করছেন। ইউনূস সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বারবার দাবি করে যাচ্ছিল, শেখ হাসিনার সরকার সবকিছু শূন্য করে দিয়ে গেছে। যদিও সেসব আপ্তবাক্য পদে পদে ভুল প্রমাণ হচ্ছে। শেখ হাসিনার সরকারের মজুদকৃত চালের বস্তায় তাঁর নাম দেখে হতদরিদ্র সাধারণ মানুষের সামনে প্রকৃত সত্য উঠে আসছে। আর সেই সত্য আড়াল করতেই চলছে রঙ দিয়ে শেখ হাসিনার নাম ঢেকে দেওয়ার কাজ। দেশের বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে দেখা গেছে এমন চিত্র। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় খাদ্য গুদামে সুবিধাভোগীদের জন্য সরকারি বরাদ্দের মজুদকৃত চালের বস্তায় লেখা—‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’। এ নিয়ে সমালোচনা শুরুর পর সেই বস্তার লেখাটি কালি দিয়ে মুছে দিয়েছেন উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রুবেল আলম। তেঁতুলিয়া উপজেলা খাদ্য গুদাম চত্বরে নিজ হাতে এসব চালের বস্তায় থাকা শেখ হাসিনার স্লোগানটি খাদ্য পরিদর্শক মুছে দেন। ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১২৩ মেট্রিকটন চাল ডিলারদের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণ করা হবে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় খাদ্য গুদাম ও চাল বিতরণের সময় পতিত সরকারের শেখ হাসিনার নাম সংবলিত স্লোগান বিভিন্ন চালের বস্তায় দেখা যায়। আর এতে জনমনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। শেখ হাসিনা হতদরিদ্রদের জন্য চাল রেখে গেছেন, যা এখনো বিদ্যমান, এমন দৃশ্যে তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তারা এতে বিব্রতবোধ করেন। পরে শ্রমিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে নিয়ে নিজ হাতে কালো কালি দিয়ে প্রতিটি বস্তার নাম মুছে দেন উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রুবেল আলম। এখন যে চালের বস্তাগুলো বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ ও বিতরণ পয়েন্টে যাচ্ছে সেই বস্তাগুলোতে পতিত সরকারের শেখ হাসিনার নাম ও স্লোগান থাকছে না। তেঁতুলিয়া উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক রুবেল আলম বলেন, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অন্তরা মল্লিক মহোদয় নির্দেশ প্রদান করেছেন এবং সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সকাল থেকে বস্তার ওপরে নাম ও স্লোগান মুছে দেওয়ার কাজ চলছে। তিনি বলেন, আমরা ৫ই আগস্টের পর থেকে এমন কাজ অব্যাহত রেখেছি৷ তবে শ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে গিয়ে কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে কিনা এই সন্দেহ থাকায় আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজেই রং তুলি দিয়ে কাজটি করছি। আমি মনে করছি এটি আমার নৈতিক দায়িত্ব। আমরা আশাবাদী আমাদের উপজেলা থেকে নাম ও স্লোগানবিহীন চালের বস্তা যাবে প্রতিটি ইউনিয়নের চাল বিতরণ পয়েন্টে। এছাড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর পূর্ব ইউনিয়নে হতদরিদ্রদের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণের সময় বস্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে স্লোগান দেখে বিরক্ত হয়ে চাল বিতরণ না করেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রাজীব চৌধুরী অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। ১৮ই সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার দুপুরে ইউনিয়নের ৬০ জন হতদরিদ্র মানুষের মধ্যে প্রতিজনকে ৩০ কেজি করে চাল বিতরণের কথা ছিল। এ সময় ইউএনও রাজীব চৌধুরী, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন বলেন, ইউএনও স্যার চাল বিতরণ উদ্বোধন করতে এসেছিলেন। তবে কোনো কারণে তিনি বিরক্ত হয়ে চলে যান। প্রথমে কারণ বলতে না চাইলেও পরে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর হেলাল উদ্দিনও মুখ খুললেন; জানালেন, এক বছর পরেও আগের বস্তায় শেখ হাসিনার নামে স্লোগান দেখে বিরক্ত হয়ে থাকতে পারেন ইউএনও। মূলত শৃঙ্খলা ভঙ্গ হওয়াতেই স্যার ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজীব চৌধুরী বলেন, চাল বিতরণের অব্যবস্থাপনা দেখে আমি সেখান থেকে ফিরে আসি। জানা গেছে, বস্তাগুলোতে রঙ লেপে দিয়ে শেখ হাসিনার নাম মুছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ইউএনও। তবে এভাবে রঙ দিয়ে শেখ হাসিনার নাম মুছে দেওয়া বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। অন্তর্জালে এসব ছবি ছড়িয়ে পড়তেই সমালোচনা হয় অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে। সাইনবোর্ড পরিবর্তন, নাম মোছা ছাড়া দৃশ্যমান কোনো কৃতিত্ব নেই, তারা বরং অন্যের কৃতিত্ব নিজেদের নামে চালাতে ব্যস্ত, এমন মন্তব্য করছেন অনেকেই। কেউ কেউ বলছেন, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটানোর পর ১৩ মাসের বেশি সময় চলে গেছে। এখনও পর্যন্ত রয়ে গেছে তাঁর সরকারের মজুদকৃত চাল। ‘শেখ হাসিনা দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বানিয়ে রেখে গেছে’- ড. ইউনূস ও তার উপদেষ্টাদের এসব বক্তব্য যে ভুয়া, তা এখন মানুষ বুঝতে পারছে।