আরাকান আর্মির ওপর হামলায় বাংলাদেশের সম্পৃক্ততার অভিযোগ আরকান সেনাপ্রধানের

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ৮:৩৫ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান গৃহযুদ্ধের ছায়ায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নতুন উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। আরাকান আর্মির (এএ) নেতা জেনারেল তোয়ান মারত নাইং অভিযোগ করেছেন যে, গত ১৮ই সেপ্টেম্বর রাতে উত্তর রাখাইনের মংডু টাউনশিপে তাদের একটি ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)। এই হামলার পেছনে বাংলাদেশের কয়েকজন কর্মকর্তার হাত রয়েছে বলে দাবি করে তিনি সরাসরি অভিযোগ করেছেন। হামলায় আরাকান আর্মির সদস্যরা হতাহত হয়েছেন, যদিও এর সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি। তোয়ান মারত নাইং বলেছেন, “রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় হামলা চালানোর নির্দেশ পাচ্ছে। এতে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা স্পষ্ট।” তিনি আরও জানিয়েছেন যে, তাউংপিও এলাকায় (যা বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে) আরও হামলার পরিকল্পনা চলছে, যা সীমান্ত নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। এই অভিযোগের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিয়েছে বলে জানা যায়নি। ইরাওয়াদ্দি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ইয়াঙ্গুনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে অতীতের ঘটনা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ এ ধরনের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে খারিজ করে এসেছে। ২০১৯ সালে মিয়ানমার সরকারের অনুরূপ অভিযোগের জবাবে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, “আরাকান আর্মি বা আরসার কোনো ঘাঁটি বাংলাদেশে নেই। এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যা।” আন্তর্জাতিক সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, আরাকান আর্মি এবং রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত রাখাইন রাজ্যে বহুল প্রসারিত। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে আরসা, আরএসওসহ একাধিক গোষ্ঠী সক্রিয়, যারা মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত। এই গোষ্ঠীগুলো আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য একত্রিত হচ্ছে, যা সীমান্তে অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা সীমান্তে সতর্কতা বাড়িয়েছে, এবং সাম্প্রতিককালে আরাকান আর্মির সদস্যদের প্রবেশের ঘটনা সতর্কতার কারণ হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির অগ্রগতি দ্রুতগতির। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া অভিযানে তারা ১৭টি টাউনশিপের মধ্যে ১২টি দখল করেছে, এবং বাংলাদেশ সীমান্তের প্রায় সম্পূর্ণ অংশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এতে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবর্তন এবং সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনারের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সংঘর্ষে রোহিঙ্গা বেসামরিক নাগরিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বাংলাদেশ সরকারের জন্য এই অভিযোগ চ্যালেঞ্জিং। একদিকে রোহিঙ্গা সংকট ম্যানেজ করতে হচ্ছে, অন্যদিকে সীমান্তে সশস্ত্র গোষ্ঠীর উত্থান নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি কূটনৈতিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, “আমরা সব অভিযোগ তদন্ত করব এবং প্রয়োজনে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করব।” সীমান্তবর্তী এলাকায় বাসিন্দারা আতঙ্কিত। বান্দরবান এবং কক্সবাজারের স্থানীয়রা বলছেন, গুলির আওয়াজ এবং অস্ত্রের চোরাচালানের ঘটনা বেড়েছে। বিজিবি সূত্র জানিয়েছে, তারা ২৪ ঘণ্টা সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। এই ঘটনা বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে দিতে পারে, যেখানে অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা এবং আঞ্চলিক শান্তি উভয়ই দাঁড়িয়ে আছে।