আওয়ামী লীগ সরকারের চালু করা অনলাইন জিডির কৃতিত্বটাও চুরি অন্তর্বর্তী সরকারের!

বাংলাদেশে পুলিশের অনলাইন জিডি সিস্টেম ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে নতুন করে বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইউনূস সরকার ঘনিষ্ঠ কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে যে, ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারই নাকি এ সেবা চালু করেছে। যদিও প্রকৃতপক্ষে এই অনলাইন জিডি চালু হয়েছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই। ২০২২ সালের ২১শে জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে অনলাইন জিডি কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। প্রথমে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৫০টি থানায় এ সেবা শুরু হয়, পরে তা ধীরে ধীরে সারাদেশে বিস্তৃত হয়। বহু মানুষ এ সুবিধা গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ডিজিটাল কার্যক্রম শুরুর সময় একইদিনে ছয়টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। প্রকল্পগুলো হলো—ইলেকট্রনিক এফআইআর ও জিডি ব্যবস্থা, পদ্মা সেতুতে নির্বিঘ্নে যান চলাচল ও সেতু ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পদ্মা সেতু উত্তর ও দক্ষিণ থানা, বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মিত ১২০টি গৃহ হস্তান্তর, পুলিশ হাসপাতালসমূহের আধুনিকায়ন প্রকল্পের আওতায় ১২টি পুলিশ হাসপাতাল আধুনিকায়ন,৬টি নারী ব্যারাক নির্মাণ। সেসময় অনলাইন জিডি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিটি থানা ও তাদের নিয়ন্ত্রণকারী সার্কেল, জোন কিংবা জেলা বা মেট্রো ইউনিটসহ সকল পর্যায়ে প্রায় ৬ হাজার ৬০০ পুলিশ কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে প্রশিক্ষিত করে অনলাইন জিডি চালু করার সব প্রস্তুতি সম্পন্নের পর উদ্বোধন করা হয়। তবে জুলাই-আগস্টের রাজনৈতিক অস্থিরতা, পুলিশের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের ওপর ধ্বংসযজ্ঞ এবং ৫ই আগস্ট পরবর্তী বাস্তবতায় অ্যাপটি দীর্ঘদিন ধরে হালনাগাদ হয়নি এবং কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায়। সম্প্রতি প্রযুক্তিগত ত্রুটি দূর করে অ্যাপটি হালনাগাদ করা হয়েছে। কিন্তু কেবল এই প্রযুক্তিগত হালনাগাদ করেই পুরো উদ্যোগের কৃতিত্ব ড. ইউনূস ও তার সরকারের নামে প্রচার করা হচ্ছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বারবার নিজেদের প্রশাসনিক ব্যর্থতা আড়াল করতে ইতিহাস বিকৃতির পথ বেছে নিচ্ছে। অনলাইন জিডি কার্যক্রমের কৃতিত্বও সেই কৌশলের অংশ। একইসাথে তারা দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের শুধুমাত্র সাইনবোর্ড বদলে সেখানে নিজেদের নাম জুড়ে দিয়ে কৃতিত্ব চুরি ও জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। সমালোচকরা অভিযোগ করেছেন, ধর্ষণ, হত্যা, অপহরণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ গত এক বছরে বহুগুণ বেড়েছে। কিন্তু এসব ব্যর্থতার দায় স্বীকার না করে বরং আওয়ামী লীগ সরকারের অর্জনকে নিজেদের নামে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ড. ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলমের দপ্তর থেকে প্রচার করা হচ্ছে, অনলাইন জিডি সেবা তাদের নেতৃত্বেই এসেছে। অথচ এ দাবির কোনো ভিত্তি নেই। বাস্তবতা হলো, শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনলাইন জিডি কার্যক্রম চালু হয়। বর্তমান সরকার কেবল পূর্ববর্তী উদ্যোগটি পুনরায় সচল করেছেন। যা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাদেরকে ক্ষমতায় বসানোর আন্দোলনের মাধ্যমেই। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, যদি একটি সরকারের ডিজিটাল উদ্যোগের কৃতিত্ব নিয়েই বিভ্রান্তি তৈরি হয়, তবে প্রশাসনের মৌলিক দায়িত্বগুলো কীভাবে পালিত হচ্ছে? পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এটি শুধু কৃতিত্ব চুরি নয়, বরং অন্তর্বর্তী সরকারের দেশ পরিচালনায় চরম ব্যর্থতারই প্রতিচ্ছবি।