রমজানে কোরআন পড়ুন, কোরআন বুঝুন

৫ এপ্রিল, ২০২৩ | ৪:০৯ অপরাহ্ণ
অনলাইন নিউজ ডেস্ক , ইউ এস বাংলা ২৪

একজন মুসলিমের প্রাত্যহিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ পবিত্র কোরআন। কোরআনের নির্দিষ্ট অংশ ছাড়া নামাজ হয় না। কোরআনে প্রণিত হয়েছে মানবজীবনের পূর্ণাঙ্গ বিধিমালা। আবার নামাজের বাইরে কোরআন তেলাওয়াতকে দেওয়া হয়েছে ইবাদতের মর্যাদা। মর্ম না বুঝে পড়েও হরফ প্রতি পাওয়া যায় দশটি করে নেকি। অনারবদের জন্য কোরআনের মর্ম উপলদ্ধি দুরূহ হলেও তা সুপাঠ্য। কোরআনের মর্ম না বুঝে পড়েও ভীষণ প্রশান্তি পাওয়া যায়। কোরআনের অপার্থিব সুর আরব অনারব যে কারো মন কাড়ে। এগুলো কোরআনের বিস্ময়কর বৈশিষ্ট। রমজানকে বলা হয় কোরআনের মাস। রমজান মাসে প্রথম কোরআন নাজিল শুরু হয়। তাই রমজান আগমন করলে কোরআন চর্চাকে ব্যাপককভাবে জোরদার করা স্বয়ং কোরআনের অধিকার। এই অধিকার রক্ষা করা সকল মুসলমানের দায়িত্ব। আর এই অধিকার রক্ষা হবে কোরআনের পঠনপাঠন, মর্ম উপলদ্ধি এবং তা বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। যারা কোরআন শিখে ও শেখায় তারা সর্বোত্তম ব্যক্তি হিসেবে গণ্য। এমনটা হয়েছে কোরআনের বিশেষ মর্যাদার কারণে। কোরআন নিজে মর্যাদাসম্পন্ন এবং তার চর্চাকারীকেও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করে। আর মুসলমান হিসেবে যারা ন্যূনতম কোরআন বিশুদ্ধভাবে পড়তে পারে না তারা সবচেয়ে বড় মূর্খ হিসেবে গণ্য। তারা সরল সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত। পরকালে তাদের অবস্থা হবে ভয়াবহ। সুরা ফাতেহাসহ কমপক্ষে ছোট ছোট চারটি সুরা মুখস্থ করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য ফরজে আইন। কেননা তা ছাড়া নামাজ শুদ্ধ হয় না। কারো যদি এতটুকু পরিমান কোরআন মুখস্থ থাকে কিন্তু তারতিল অনুযায়ী বিশুদ্ধভাবে পড়তে না পারে এবং বিশুদ্ধভাবে পড়ার জন্য চেষ্টাও না করে তাহলেও তার নামাজ শুদ্ধ হবে না। আর কেরাত অশুদ্ধ হলেও যদি শুদ্ধ করার জন্য নিয়মিতভাবে চেষ্টা করতে থাকে তাহলে নামাজ শুদ্ধ হবে। আর যদি চেষ্টা করা ছেড়ে দেয় তাহলে নামাজ শুদ্ধ হবে না। (দুররুল মখতার ২/৩৯৬, হিন্দিয়া ১/৭৯) নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য যাদের ন্যূনতম কেরাত মুখস্থ নেই কিংবা মুখস্থ থাকলেও বিশুদ্ধভাবে পড়তে পারে না তাদের জন্য আবশ্যক হলো, এই রমজান মাসকে কাজে লাগিয়ে তা যথাযথভাবে শিখে নেয়া। আর যারা নামাজ শুদ্ধ হওয়ার মতো কেরাত বিশুদ্ধভাবে পড়তে পারে তাদের জন্য করণীয় হলো, পুরো কোরআন বিশুদ্ধভাবে পড়ার জন্য নিজেকে আত্মনিয়োগ করা। কোরআনের অর্থ বোঝা কঠিন হলেও তারতিল অনুযায়ী কোরআন পাঠ করা খুবই সহজ। প্রয়োজন শুধু সামান্য প্রচেষ্টা। মহিমান্বিত এই রমজানই হলো কোরআন শেখার জন্য প্রচেষ্টা করার শ্রেষ্ঠ সময়। রমজানে সকল নেক কাজের প্রতিদান দেয়া হয় সত্তর গুণ বেশি। সেই হিসেবে রমজান মাসে কোরআনের প্রতিটি হরফ পাঠের বিনিময়ে দেয়া হবে সাতশো করে নেকি। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করবে তার একটি নেকি হবে। আর প্রতি নেকি হয় দশ গুণ হিসাবে। আমি বলি না যে, আলিফ, লাম ও মিম মিলে একটি হয়ফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মিম আরেকটি হরফ। মিশকাত ২১৩৭ যারা পুরো কোরআন তারতিল অনুযায়ী বিশুদ্ধভাবে পাঠ করতে পারে তাদের জন্য করণীয় হলো, রমজানের বরকতময় এই সময়ে কোরআনের অর্থ ও মর্ম বোঝার চেষ্টা করা। যারা বিশুদ্ধভাবে পাঠ করতে পারে তাদের জন্য শুধু পাঠ করলেই কোরআনের অধিকার আদায় হবে না। বরং অর্থ বোঝার চেষ্টাও করতে হবে। কেননা কোরআনে রয়েছে মানবজীবনের বিধিমালা, রয়েছে অনেক উপদেশ, উদাহরণ, ইতিহাস ও বার্তা। সেগুলো ভালোভাবে জেনে বুঝে দৈনন্দিন জীবনে পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলেই আদায় হবে কোরআনের অধিকার। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, আর আমি মানুষদের বোঝানোর জন্যে এ কোরআনে সব ধরনের উদাহরণই পেশ করেছি। সুরা রূম ৫৮ আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য, উপদেশ গ্রহণ করার কেউ আছে কি? সুরা কমার ১৭ হে লোকসকল! আমি তোমাদের প্রতি এমন একটি কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যার মধ্যে আছে তোমাদেরই আলোচনা, তোমরা কি তারপরও বুঝো না? সুরা আম্বিয়া ১০ আমি আপনার প্রতি নাজিল করেছি এক বরকতময় কিতাব, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে এবং জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরা উপদেশ গ্রহণ করে। সুরা সোয়াদ ২৯ কোরআনের এই আয়াতগুলো দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যায়, কোরআনের অর্থ বোঝার চেষ্টাও করতে হবে। যারা কোরআন বিশুদ্ধভাবে পড়তে পারেন তারা অর্থ বোঝা ও মর্ম উপলদ্ধি করার জন্য কোরআনের অনুবাদসহ সংক্ষিপ্ত তাফসিরের নির্ভরযোগ্য কোন গ্রন্থের সহায়তা নিতে পারেন। বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য তাফসিরে মারেফুল কোরআনের বাংলা অনুবাদ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আসুন, কোরআনের মাসে আমরা কোরআন চর্চায় মনোযোগী হই। যদিও কোরআনের চর্চা সারা বছরই নিয়মিত করতে হয়। তবুও রমজান মাস উপলক্ষে কোরআন চর্চাকে ব্যাপকভাবে জোরদার করার তাগিদ দিলে তা অব্যাহত থাকবে রমজানের পরও।