ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করার পথে হাঁটছে উয়েফা

ফুটবল মাঠের লড়াই এবার ছাপিয়ে গেল কূটনীতি ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে। ইউরোপীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা উয়েফা ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে বহিষ্কার করার প্রস্তাব নিয়ে এগোচ্ছে—এমন ইঙ্গিত দিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, উয়েফার ২০ সদস্যের নির্বাহী কমিটির বেশিরভাগই ইসরায়েলি দলগুলোকে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে ভোট দিতে পারেন। এই সিদ্ধান্ত হলে আগামী বছরের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেই আর নামতে পারবে না ইসরায়েল। অথচ দুই সপ্তাহ পরই নরওয়ে ও ইতালির বিপক্ষে তাদের গুরুত্বপূর্ণ বাছাইপর্বের ম্যাচ রয়েছে। তবে ফিফা এই বিষয়ে কী অবস্থান নেবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের চাপ এখানে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ইতোমধ্যেই জানিয়েছে, ইসরায়েলকে বিশ্বকাপ থেকে বাদ দেওয়ার উদ্যোগ ঠেকাতে তারা সক্রিয়ভাবে কাজ করবে। ২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসনের পর রাশিয়াকে সব আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে সরিয়ে দিয়েছিল উয়েফা ও ফিফা। অনেকে মনে করছেন, গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে একই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ইসরায়েলের বিরুদ্ধেও। সম্প্রতি স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেসও প্রকাশ্যে বলেছেন—রাশিয়ার মতো ইসরায়েলকেও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া থেকে নিষিদ্ধ করা হোক। এদিকে উয়েফা সুপার কাপের ম্যাচে “Stop Killing Children” ও “Stop Killing Civilians” লেখা ব্যানার মাঠে দেখা গিয়েছিল। ফ্রান্সে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালেও পিএসজি সমর্থকরা “Stop Genocide in Gaza” ব্যানার তুলেছিলেন। এমনকি গতকাল গ্রিসে ইউরোপা লিগের ম্যাচে মাকাবি তেল আবিবের বিপক্ষে গ্রিক সমর্থকরাও ‘স্টপ জেনোসাইড’ লেখা ব্যানার প্রদর্শন করেছেন। এদিকে ইসরায়েলের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি মন্ত্রী মিকি জোহর, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি মোশে জুয়ারেস একসঙ্গে কাজ করছেন উয়েফার নির্বাহী সভায় প্রস্তাবটি আটকে দেওয়ার জন্য। কাতারসহ বিভিন্ন দেশও তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে, বিশেষ করে দোহায় হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে সম্প্রতি ইসরায়েলের বিমান হামলার পর। যদি উয়েফা সত্যিই ভোটে যায় এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন পায়, তবে ইসরায়েলি ফুটবলের জন্য এটি হবে যুগান্তকারী আঘাত—শুধু মাঠের লড়াই নয়, আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও যার প্রতিধ্বনি শোনা যাবে। এখন দৃষ্টি সবার জুরিখের দিকে, যেখানে ফিফার কাউন্সিল বৈঠকে চূড়ান্ত আলোচনার মঞ্চ বসবে আগামী সপ্তাহে।