সৌরবিদ্যুতে ভর্তুকি কমলেও লাভ হবে গ্রাহকের

প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়ায় উৎপাদন খরচ কমে এসেছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ খাতের বিভিন্ন সূত্র। এতে সরকারের ওপর ভর্তুকির চাপ হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি, গ্রাহকরাও লাভবান হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, বিগত অর্থবছরে সরকার বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিয়েছে প্রায় ৬২ হাজার কোটি টাকা। তবে নতুন প্রকল্পগুলোর জন্য আহ্বান করা দরপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আগের তুলনায় কিলোওয়াট প্রতি সৌরবিদ্যুতের গড় ব্যয় ২১ শতাংশ কমে গেছে। আগে যেখানে এ খরচ ছিল ১০ ডলার ৪৭ সেন্ট, এখন তা নেমে এসেছে ৮ ডলার ২৭ সেন্টে। এ পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা দেখছেন, বিগত সরকারের সময়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিশেষ আইনের অধীনে এলওআই (লেটার অব ইনটেন্ট) ইস্যুর মাধ্যমে সৌর প্রকল্প বরাদ্দ দেওয়ার প্রবণতা। অনেক ক্ষেত্রে দরপত্র আহ্বান ছাড়াই প্রকল্প দেওয়া হয়। ফলে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রে প্রকল্প আহ্বান করায় ব্যয় কমেছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘সৌর বিদ্যুতের খরচ কমাতে আমরা নতুন করে দরপত্র ডেকেছি। প্রতিযোগিতা থাকায় দামও কমে এসেছে। এতে সরকার ও গ্রাহক উভয়ই উপকৃত হবে।’ বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক এবং জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘আমরা সৌরবিদ্যুতে পিছিয়ে রয়েছি। এখন দেরি না করে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই প্রকল্পগুলো অ্যাওয়ার্ড দেওয়া উচিত, না হলে এগুলো ঝুলে যেতে পারে।’ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (পিডিবি) সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে চার ধাপে ৫৫টি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে, যেগুলোর সম্মিলিত উৎপাদন ক্ষমতা ৫ হাজার ২৩৮ মেগাওয়াট। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গ, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলের দরপত্র এরই মধ্যে খোলা হয়েছে। দরপত্র বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, কিলোওয়াট প্রতি ব্যয় উত্তরবঙ্গে প্রস্তাব করা হয়েছে ৭ দশমিক ৮৯ সেন্ট, চট্টগ্রামে ৭ দশমিক ৯৫ সেন্ট, ময়মনসিংহে ৮ দশমিক ৮৮ সেন্ট এবং সিলেটে ৯ দশমিক ০৬ সেন্ট। অথচ পূর্ববর্তী সরকারের আমলে একই অঞ্চলে এ খরচ ছিল যথাক্রমে ১০ দশমিক ৪২, ১২ দশমিক ১০, ৯ দশমিক ৯৩ ও ৯ দশমিক ৮৮ সেন্ট। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই হার বিদ্যমান কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর তুলনায় তুলনামূলক কম। যেমন—ডিজেলচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বর্তমানে কিলোওয়াট প্রতি ১৪ থেকে ১৫ দশমিক ০৩ সেন্ট, এলএনজিতে ৮ দশমিক ৪৩ থেকে ৯ দশমিক ৩৬ সেন্ট এবং এলওআই ভিত্তিক পুরোনো সৌর প্রকল্পে গড় ব্যয় ১৩ দশমিক ২৯ সেন্ট। বিপরীতে নতুন প্রকল্পগুলোর গড় ব্যয় ৮ দশমিক ২৭ সেন্ট। বিপ্পার (বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশন) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘দেশীয় কোম্পানির সক্ষমতা বেড়েছে, ইপিসি কাজগুলো নিজেরাই করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সৌর প্যানেল ও ব্যাটারির দাম কমেছে। তাছাড়া প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের প্রভাব তো আছেই।’ এ প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্ট মহলের পরামর্শ—রাজনৈতিক বিবেচনার বাইরে গিয়ে টেকসই ও সাশ্রয়ী সৌরবিদ্যুৎ খাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হোক। সময়মতো সিদ্ধান্ত নিলে দেশ উপকৃত হবে, বিলম্বে সেই সম্ভাবনা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।