নীলক্ষেতেই ছাপা ডাকসুর ব্যালট: সংখ্যায় বিশাল গরমিল, নির্বাচনে ঘাপলা

বহুল আলোচিত-সমালোচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে অরক্ষিতভাবে নীলক্ষেতে—এমন তথ্য উঠে এসেছে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুসন্ধানে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব ব্যালট ছাপানো হয়েছিল সর্বোচ্চ গোপনীয়তায় উন্নতমানের প্রেসে। কিন্তু ঘটনার পরম্পরা আর সংশ্লিষ্টদের জবানবন্দি বলছে ভিন্ন কথা। নীলক্ষেতের গাউসুল আজম মার্কেটের জালাল প্রেসেই ছাপানো হয় ব্যালট। প্রেসের মালিক মো. জালাল স্বীকার করেছেন, ডাকসু নির্বাচনে ব্যবহৃত ব্যালট তার প্রেসেই ছাপা হয়েছে। তার ভাষ্য, একজন মো. ফেরদৌস নামের ব্যক্তি তাকে কাজটি দিয়েছিলেন, আর তিন দিনেই ব্যালট ছাপানোর কাজ শেষ হয়। জালাল জানিয়েছেন, তার প্রেস থেকেই ৪৮ হাজার পিস কাগজে (প্রতি কাগজে দুটি ব্যালট) মোট ৯৬ হাজার ব্যালট সরবরাহ করা হয়েছিল। অন্যদিকে, সেই ব্যালট পরে কাটিং করা হয় নীলক্ষেতের আরেক দোকান ‘মক্কা পেপার কাটিং হাউস’-এ। দোকানটির মালিক ও কর্মচারীরা জানিয়েছেন, ফেরদৌস নামের ওই ব্যক্তি সেখানেও কাজ দেন। তাদের হিসাবে, একরাতে কাটা হয় ২২ রিম কাগজ, যা থেকে তৈরি হয় প্রায় ৮৮ হাজার ব্যালট। ফলে জালাল প্রেসের হিসাব (৯৬ হাজার) আর কাটিং সেন্টারের হিসাব (৮৮ হাজার)-এর মধ্যে দেখা দিয়েছে ৮ হাজার ব্যালটের গরমিল। তবে ব্যালট ছাপা ও ওএমআর মেশিনে গণনার টেন্ডারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান আঞ্জা কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন দাবি করেছেন, কেরানীগঞ্জে তাদের নিজস্ব প্রেসেই ব্যালট ছাপানো হয়েছে। এমনকি তিনি বলেছেন, তারা মোট ১ লাখ ৫৩ হাজার ব্যালট ছেপেছেন। যদিও তার স্বীকারোক্তির পাশাপাশি দায় চাপিয়েছেন কর্মচারীদের ওপর। এদিকে, নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। প্রতিজন ভোটার ছয়টি আলাদা পাতায় ভোট দেন। নিয়ম অনুযায়ী এতে ব্যালটের মোট প্রয়োজন দাঁড়ায় ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৫০টি। অথচ অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে এসব সংখ্যার কোথাও সামঞ্জস্য নেই। প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন দাবি করেছেন, ডাকসুর ব্যালট ছাপানো একটি অত্যন্ত স্পেশালাইজড প্রক্রিয়া, যা সাধারণ প্রেসে সম্ভব নয়। তার ভাষায়, “এই মেশিনের দাম ৫০ থেকে ৭০ লাখ টাকা। একমাত্র একটি ব্র্যান্ডই আবেদন করেছিল টেন্ডারে।” নীলক্ষেতে ব্যালট ছাপানোর প্রমাণ দেখানোর বিষয়ে তিনি বলেন, “যেহেতু বলছেন প্রমাণ আছে, তাহলে প্রশাসন অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।” সবশেষে, অনুসন্ধান বলছে—ডাকসুর ব্যালট ছাপানোর জায়গা থেকে শুরু করে সংখ্যা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে রয়েছে অসঙ্গতি আর গরমিল।