ইউনূস আমলে ভিসা পাচ্ছেন না বাংলাদেশিরা, বিদেশি ইমিগ্রেশন থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে অনেককে

গত বছরের জুলাই-আগস্টের দাঙ্গার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় বসে পড়ে। সে থেকেই বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থান ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে বিদেশযাত্রায়। বিশেষ করে উন্নত দেশগুলো এখন আর বাংলাদেশি নাগরিকদের সহজে ভিসা দিচ্ছে না। শিক্ষার্থীরাও এর বাইরে নয়; বরং অনেক ক্ষেত্রে ভিসা পেলেও ইউরোপ ও আমেরিকার ইমিগ্রেশন থেকে তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। বিদেশগামীদের অভিযোগ, আগে তুলনামূলকভাবে সহজে ভিসা পাওয়া গেলেও বর্তমানে প্রক্রিয়াটি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। ট্রাভেল এজেন্সি সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, ভিসা অনুমোদনের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। আগে যেখানে শতকরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ আবেদন অনুমোদিত হতো, এখন তা নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে। বিভিন্ন দেশ বাড়তি শর্ত আরোপ করছে—যেমন দীর্ঘমেয়াদি পাসপোর্ট, ব্যাংক হিসাবের আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণপত্র এবং পূর্ববর্তী বিদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। অনেক ক্ষেত্রে আগে অন-অ্যারাইভাল ভিসা পাওয়া যেত, এখন সেখানেও নানা জটিল শর্ত যোগ করা হয়েছে। মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতেও ভিসা সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, তাজিকিস্তানে একাধিকবার আবেদন করেও অনেকে ভিসা পাচ্ছেন না। ভ্রমণ ভিসা ও কর্মসংস্থান ভিসা উভয় ক্ষেত্রেই অনিশ্চয়তা বেড়েছে। ভারতের ভিসা বন্ধ হয়ে যাওয়া পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। কারণ, ইউরোপীয় দেশগুলোর অধিকাংশ দূতাবাস ভারতে অবস্থিত। ফলে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি আবেদন করার পথ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ ভ্রমণকারীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। একজন শিক্ষার্থী তার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, “আমি আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। সব শর্ত পূরণ করেও ভিসা হাতে পাওয়ার পর আমেরিকার জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন থেকে আমাকে ফেরত পাঠানো হয়। এখন ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি দুশ্চিন্তায় আছি।” এমন পরিস্থিতি শুধু ব্যক্তিগত ভোগান্তি নয়, দেশের ট্রাভেল এজেন্সি খাতেও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। প্রতিদিন শত শত আবেদন আটকে যাচ্ছে। অথচ এই সেক্টরের সঙ্গে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতা এবং নীতিনির্ধারণে অদক্ষতার কারণেই বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এর ফলে উন্নত দেশগুলো বাংলাদেশিদের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে এবং ভিসা দিতে অনীহা প্রকাশ করছে। পরিস্থিতি দ্রুত সমাধান না হলে শিক্ষার্থী, কর্মী ও ব্যবসায়ী—সব শ্রেণির মানুষই আন্তর্জাতিক সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।