বন্ধ হচ্ছে সিইপিজেডের কারখানাগুলো: সংকট ধামাচাপায় সংবাদ প্রকাশে বাধা দিলেও দাবিয়ে রাখা যায়নি শ্রমিকদের

কার্যাদেশ বন্ধ, কাঁচামাল আমদানি করতে না পারাসহ অর্থনৈতিক নানা সংকটে পড়ে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) গত এক বছরে অন্তত ২০টির মত কারখানা বন্ধ কিংবা বন্ধের পথে রয়েছে। যার প্রেক্ষিতে অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিকের জীবনে নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। সিইপিজেড-এর একটি সূত্র বলছে, সর্বশেষ এক মাসেই বন্ধ হয়েছে সাতটি কারখানা। এর মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি ডেনিম উৎপাদনকারী কারখানার মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে বলে সূত্র বলছে। দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় একটি ডেনিম উৎপাদনকারী গ্রুপের কাছে সেই কারখানাটির মালিকানা হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে জানা গেছে, কোনো কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে কিংবা বেতন-ভাতাসহ কোনো জটিলতা সৃষ্টি হলে সে খবর যেন জানাজানি না হয় এবং সংবাদমাধ্যমে খবর না যায়, সেজন্য কারখানাগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে। বেপজা নিয়ন্ত্রিত এলাকার ভেতরে যা কিছু ঘটছে, সেসব খবর পত্রপত্রিকায় গেলে দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে; আর রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হলে প্রভাব পড়তে পারে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে। একইসাথে বিদেশি ক্রেতাদের আস্থাহীনতা সৃষ্টি হলে অন্য চালু কারখানাগুলোর ব্যবসাতেও নেমে আসতে পারে অনিশ্চয়তা। এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে সিপিজেড-এর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে। তবে, লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন যেখানে, সেখানে এসব খবর ধামাচাপা দেওয়া অসম্ভব। এরইমধ্যে আজ ২৪শে সেপ্টেম্বর, বুধবার রাস্তায় নেমেছেন বন্ধ হয়ে যাওয়া দুটি কারখানার হাজার হাজার শ্রমিক। সকাল ৯টা থেকে তারা চট্টগ্রামের ফ্রি-পোর্ট এলাকার বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করেন। এতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। তুমুল ভোগান্তিতে পড়েন এই সড়ক ব্যবহারকারী সাধারণ মানুষ। জানা গেছে, সিইপিজেডের নাসা গ্রুপের দুটি কারখানায় প্রায় ৩ হাজার শ্রমিক। অক্টোবর থেকে কারখানা দুটি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন মালিকপক্ষ। এতে শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভে নেমে পড়েছেন। চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের এসপি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, দুটি কারখানা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে মালিকপক্ষ। এখন শ্রমিকরা বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন। আমরা বুঝিয়ে তাদেরকে মূল সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছি। শ্রমিকরা জানান, আমাদের দুটি কারখানার শ্রমিকদের কয়েক মাসের বেতন বকেয়া। সেই বেতন না নিয়ে উল্টো কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয়। এতগুলো শ্রমিক আমরা কোথায় যাবো। বকেয়া বেতন পেলে কিছুটা স্বস্তি হতো৷ কিন্তু সেটিও দিচ্ছে না। মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। তবে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানার সামনে জড়ো হয়েছেন। এসময় তা ‘শ্রমিক ঠকানো কালো চুক্তি মানি না, মানব না’, ‘শ্রমিকের রক্ত চুষে খেতে দেবো না’ … ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছেন।