সড়কের কাজ কাগজে, বাস্তবে নেই

২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ৮:১২ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

দুই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে খুলনার অতি গুরুত্বপূর্ণ শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ। এক বছরের কাজ সাড়ে তিন বছরেও শেষ করতে না পারায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে চুক্তি বাতিলের পর জব্দ করা হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জামানতের ৭ কোটি টাকা। তবে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের বিরুদ্ধে আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে এসে ক্ষতিপূরণ বাবদ আরও ৬০ কোটি টাকা দাবি করেছে মাহাবুব ব্রাদার্স নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনার আলোচিত এ সড়কটিতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) খুলনা অফিস। খুলনা অফিসের উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদের নেতৃত্বে সড়কটির রূপসা সেতু অংশের ৩০০ মিটার এলাকা পরীক্ষা করা হয়। থার্ডপার্টি (নিরপেক্ষ) প্রকৌশলীর মাধ্যমে চালানো ওই পরীক্ষায় মেজারমেন্ট বুকে থাকা কাজ শেষ হওয়া অংশের মধ্যে ব্যাপক অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে দুদক। সরেজমিন ওই পরীক্ষায় দেখা যায়, তিনশ মিটারের মধ্যে নিচে ১০ ইঞ্চি বালুর লেয়ার এবং এর ওপরে ১০ ইঞ্চি সাব বেইজ থাকার কথা (৭০ শতাংশ খোয়া এবং ৩০ শতাংশ বালু)। কিন্তু দুদক অভিযানে এর কিছুই পায়নি। অথচ মেজারমেন্ট বইতে উল্লেখ করা হয়েছে, ৩ হাজার ৬৭৬ মিটার দৈর্ঘ্যের সড়কের পুরোটাতেই কাজ করা হয়েছে। দুদক খুলনা অফিসের উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, তিনটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা অতি গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে অভিযান চালিয়েছি। কেডিএ থেকে পাঠানো এ সড়কের মেজারমেন্ট বইতে ৩ হাজার ৬৭৬ মিটার সড়কের পুরোটাই কাজ হয়েছে। আমরা রূপসা সেতু সংলগ্ন এলাকায় মাত্র ৩শ মিটার এলাকা পরীক্ষা করে দেখেছি। কিন্তু মেজারমেন্ট বইয়ের সঙ্গে এখানে ব্যাপক অনিয়ম পাওয়া গেছে। দুটি লেয়ারে বালু এবং বালু-খোয়া মিক্সড যে দুটি লেয়ার ছিল, তার কোনো অস্তিত্ব পাইনি। এদিকে গত ৭ আগস্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহাবুব ব্রাদার্সের সঙ্গে করা চুক্তি বাতিল করে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)। সড়কটির বাকি কাজ শেষ করতে সংস্থাটি গত ২৪ আগস্ট নতুন করে দরপত্র আহ্বান করেছে। পরে নতুন দরপত্রের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে আদালতে মামলা এবং ৬০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে আরবিট্রেটর নিয়োগ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এর আগে নিরাপত্তা জামানত বাজেয়াপ্ত করার আদেশের বিরুদ্ধেও তারা আদালতের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করেছিল। আদালত ওই টাকা কেডিএর অনুকূলে হস্তান্তর না করতে ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছেন। গত সাড়ে তিন বছরে বিগত সরকারের পূর্তমন্ত্রী, সচিব, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা খুলনায় এসে দ্রুত কাজ শেষ করতে ঠিকাদারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কালো তালিকাভুক্ত করারও। তার পরও কাজে গতি আনেননি ঠিকাদার। প্রকল্প কার্যালয় সূত্র জানায়, গত সাড়ে তিন বছরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৭০ কোটি টাকা তুলেছে। অনেক কাজ শেষ হয়নি। বর্তমানে সড়কের বেজ টাইপ-২ (বর্তমান সড়কের ওপর পাথরের স্তর), বেজ টাইপ-১, ৪ ইঞ্চি বিটুমিনের কার্পেটিং (পিচের স্তর), তার ওপর সিলকোর্ট (বিটুমিনের আরেকটি স্তর) দেওয়া বাকি রয়েছে। ৬৬ মিটার দীর্ঘ লবণচরা সেতুর ১০টি গার্ডারের মধ্যে মাত্র একটির কাজ শেষ হয়েছে, ৯টিই বাকি। মতিয়াখালীতে দুই স্তরের স্লুইসগেটের মধ্যে এক স্তর শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে কেডিএর কয়েকজন প্রকৌশলী বলেন, ঠিকাদার স্বেচ্ছায় যোগাযোগ না করলে তারাও যোগাযোগ করতে পারেন না। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, এই সড়কের পাশে ১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ২৭টি চালকল, ২৫০টি কাঠের চেরাইকল ও বান্দাবাজারে ৪৫০টির বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নাজুক সড়কের কারণে তারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত। সড়কটি ব্যবহার করে কেসিসির ৩০ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষাধিক বাসিন্দা প্রতিদিন কষ্ট করে যাতায়াত করেন। খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. আরমান হোসেনের দাবি, ওই সড়কের ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ চলমান আছে। মেজারমেন্ট বুকে আছে যে কাজ হয়েছে, তা আমরা তথ্যপ্রমাণ সহকারে জমা দেব। সাড়ে তিন কিলোমিটার সড়কের সামনের তিন কিলোমিটার ঠিক আছে। যে স্থানটি পরীক্ষা করা হয়েছে, সেটি চলতি বর্ষার কারণে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সামনে ঠিক আছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহাবুব ব্রাদার্সের পক্ষে এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে রাজি হননি। খুলনার দৌলতপুরে তাদের অফিস তালাবদ্ধ।