সিলেটে বিপৎসীমা ছাড়াল দুই নদী, বন্যার শঙ্কা

গত কয়েক দিন ধরে প্রখর তাপে দগ্ধ হয়েছে সিলেট। এখন দেখা দিয়েছে বন্যার শঙ্কা। হঠাৎ করে বৃষ্টিপাত ও হঠাৎ উজানের ঢলে সুরমা ও কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। আকাশে মঙ্গলবারও ছিল কালো মেঘের ঘনঘটা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সিলেট কার্যালয়ের তথ্যমতে, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ও কুশিয়ারার পানি আমলসীদ পয়েন্টে ৯৩ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে নদীগুলোর পানি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সুরমার পানি কানাইঘাটে ৮২ সেন্টিমিটার, সিলেট পয়েন্টে ৩৩ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারার পানি আমলসীদে ৬৮ সেন্টিমিটার, শেওলায় ৫১ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জে ২১ সেন্টিমিটার এবং শেরপুরে ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে পানি বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. মো. আনেয়ারুল ইসলাম বলেন, সিলেটে বন্যার জন্য এ অঞ্চলের বৃষ্টিপাত দায়ী নয়। সিলেটের ওপারে ভারতে ভারি থেকে অতি ভারিবর্ষণ সিলেটে বন্যার অন্যতম কারণ। এছাড়া নদীর ভরাট, হাওড় ও পুকুরকে বাঁধ দিয়ে ছোট ছোট বাঁধ বানানোও পরিস্থিতি জটিল করছে। তিনি আরও বলেন, বর্ষার একেবারে শেষ সময়ে এসে দেশের নদ-নদী ও জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে গেছে। এর মধ্যে আবার বন্যার পূর্বাভাস এসেছে-এটা চিন্তার বিষয়। তাছাড়া ভারী বৃষ্টিপাত শুধু বন্যার ঝুঁকি নয়, ভূমিধস ও নদীভাঙনের আশঙ্কাও বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে টিলাবেষ্টিত সিলেটে ভূমিধস এখন বড় আতঙ্ক। প্রকৃতির বৈপরীত্য প্রসঙ্গে ড. আনেয়ারুল ইসলাম বলেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যে, এখন আর আমাদের দেশে ৬ ঋতু বলা যায় না। আবহাওয়ার ধরন বদলে গিয়ে বর্ষা কখনো অতি ভারী বৃষ্টি, কখনো তীব্র খরায় রূপ নিচ্ছে। এই অনিয়মিত প্রবণতাই সিলেটসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বেশি ঝুঁকির মুখে ফেলছে। আবহাওয়া অফিসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার সিলেটের আকাশ আংশিক মেঘলা থেকে অস্থায়ীভাবে ঝাপসা মেঘলা ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৫.৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৮.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাতের সর্বনিম্ন ২৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, অধিকাংশ স্থানে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি ও বজ্রসহ ঝড়ো হাওয়া থাকতে পারে। কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিলেটে বন্যা শুধুমাত্র স্থানীয় বৃষ্টিপাতের কারণে নয়। ভারতে উজানে প্রবল বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ ও হাওর ধ্বংস নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে ব্যাহত করেছে। এর ফলে পানি জমে ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি হচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ ও ২০২৪ সালের বন্যায় সিলেটে প্রায় দুই হাজার আটশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কৃষি ও মৎস্য খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ বারবার প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও সিলেটবাসী টেকসই সমাধান দেখতে পারেনি। সিটি করপোরেশনের ৪ হাজার ৬শ কোটি টাকার ড্রেনেজ প্রকল্প এখনো মন্ত্রণালয়ে ঝুলে আছে।