নেপাল, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় সরকার পতন, তবে কি দক্ষিণ এশিয়া জেন-জি বিপ্লবের উর্বর ভূমি?

বিক্ষুব্ধ জনতা যখন এগিয়ে এলো তখন লোহার গেটের শব্দ ঢোলের মতো শোনা যাচ্ছিল। মুহূর্তেই গেট ভেঙে জনসমুদ্রের প্রবেশ ঘটে। যারা নিরাপত্তা দায়িত্বে দাঁড়িয়ে ছিল তারা মুহূর্তেই ধরাশায়ী হয়। অনেক নেতার বাড়ির আঙিনা হাজার হাজার মানুষের পা পড়ে কর্দমাক্ত হয়ে যায়। কেউ নিয়ে যাচ্ছিল দামি বিছানার চাদর, আবার কেউ নিচ্ছে জুতা। গত সপ্তাহে এমনই চিত্র ছিল নেপালে। ২০২২ সালে একই ধরনের চিত্র দেখা যায় শ্রীলঙ্কায় এবং ২০২৪ সালে বাংলাদেশে। ভারত ও চীনের মাঝখানে অবস্থিত নেপালে ৩ কোটি মানুষের বসবাস। দেশটি যখন ঐতিহ্যবাহী নির্বাচনী গণতন্ত্রের বাইরে ভিন্ন ধাঁচে নিজের ভবিষ্যৎ রচনার পরিকল্পনা করছে, তখন দক্ষিণ এশিয়ায় একের পর এক সরকার পতনের ঘটনা একটি প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বলা হচ্ছে, বিশ্বের সবচেয়ে জনবসতিপূর্ণ অঞ্চল দক্ষিণ এশিয়া কি জেন-জিদের বিপ্লবের উর্বর ভূমি। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নিয়ে গবেষণা করা পল স্ট্যানিল্যান্ড বলেন, এটা খুবই আশ্চর্যজনক। এ ধরনের অস্থিরতার ফলে নতুন রাজনীতির পথ তৈরি হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার ১০ হাজার নেপালি যুবক, যাদের মধ্যে প্রবাসীরাও ছিলেন। তারা একটি অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে জরিপে অংশ নিয়ে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচিত করেন। সকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে নেপালে তিন দিনের বিক্ষোভ ও সহিংসতায় অন্তত ৭০ জন নিহত হয়। এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরই দেশটিতে আগামী বছরের মার্চে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতায় থাকতে পারেনি নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি। বাধ্য হন পদত্যাগ করতে। যদিও তিনি জেন-জিদের বিক্ষোভ নিয়ে শুরুতে বিদ্রুপ করেছিলেন। এর মাধ্যমে এটাই পরিষ্কার, দক্ষিণ এশিয়ায় রাষ্ট্রীয়ভাবে তরুণদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। এর এ থেকেই তারা আন্দোলনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। স্ট্যানিল্যান্ড আলজাজিরাকে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় এটি একটি নাটকীয় ঘটনা। কারণ এ অঞ্চলে সব সময় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাই বিক্ষোভ করেছেন। তবে এর ফলে সরকার পরিবর্তন খুব একটা হয়নি; কিন্তু এখন পুরোপুরি ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালে ভিন্ন ভিন্ন চাহিদার প্রেক্ষাপটে বিক্ষোভ শুরু হয়। তবে বিশ্লেষকরা বলেছেন, এসব দেশে সরকার পরিবর্তনের বিক্ষোভের একাধিক সমস্যা নিয়ে সৃষ্টি হলেও তরুণদের লক্ষ্য ছিল অভিন্ন। কারণ রাজনৈতিক নেতাদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতির ওপর তারা আর নির্ভর করে থাকতে চায় না। তাদের মতে, এ ধরনের বিক্ষোভ অকে অপরের জন্য শিক্ষা। এখন একটাই প্রশ্ন, পরবর্তী সময় কোথায় এ ধরনের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে পারে?