দরপত্র ছাড়াই ২ কোটি ৬৬ লাখ টাকার কাজ সম্পন্ন

১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ৭:২৮ পূর্বাহ্ণ
ডেস্ক নিউজ , ডোনেট বাংলাদেশ

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বাউন্ডারি ওয়াল, বিচারপতি ভবনের দুটি নতুন গেট স্থাপন, বিদ্যমান চারটি গেট সংস্কার ও মজবুত করা এবং ভবনের সীমানাপ্রাচীর সংস্কারসহ ঊর্ধ্বমুখী নিরাপত্তা গ্রিল স্থাপনের কাজ দরপত্র আহ্বান ছাড়াই সম্পন্ন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুই কোটি ৬৬ লাখ টাকার উল্লিখিত কাজ শেষ করার পর দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করা হয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের গেটের দেওয়াল নির্মাণ ও মাটি ভরাট কাজের ক্ষেত্রে। বিষয়গুলো গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। দরপত্রের আগে এ ধরনের বিধিবহির্ভূত কাজ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে কমিটি। তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য রাজউকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ড. ছাবের আহমেদ বলেন, উন্মুক্ত দরপত্র আহবান ছাড়া এ ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করার আইনগত কোনো সুযোগ নেই। তারা সেই কাজটাই করেছেন। আমরা তদন্ত করে বের করতে বলেছি, কেন এ ধরনের কাজ তাদের করতে হলো। কেননা এ ধরনের চর্চা একটি বিভাগের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। কমিটির অপর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যত তাড়াই থাকুক একজন প্রকৌশলীকে অবশ্যই আইন-কানুন মেনে কাজ করতে হবে। তারা আইন-কানুন উপেক্ষা করেছেন। তারা দরপত্র আহ্বান ছাড়া কাজ করেছেন। এটা কোনো যুক্তিতেই বৈধ নয়। ইলেকট্রনিক দরপত্রে (ই-জিপি) সিস্টেমে কাজ কে পাবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাহলে যে ঠিকাদার কাজটি করল তিনি কীভাবে নিশ্চিত হলেন যে পরবর্তী টেন্ডারে তিনিই কার্যাদেশটি পাবেন। এখানে তাকে এস্টিমেট আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটাই দুর্নীতি অথবা যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজগুলো করছে, সে প্রকৌশলীর নিকটাত্মীয়। অথবা প্রকৌশলী নিজেই বেনামে ঠিকাদারি করেন, অথবা রাজনৈতিক চাপে দলীয় লোকদের কাজ দিতে হয়েছে। এর মধ্যে যে কোনো একটি রহস্য অবশ্যই আছে। তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা আরও বলেন, আমরা ফাইন্ডিংস দিয়েছি। এখন ব্যবস্থা নেবে গণপূর্ত বিভাগ। গণপূর্ত মেইনটেন্যান্স বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার কবির বলেন, দুদকের সাবেক সচিব খোরশেদা বেগমের অনুরোধপত্র পেয়ে আমরা কাজগুলো করেছি। তখনকার পরিস্থিতি বিবেচনা করে কাজ করতে হয়েছে। আমরা নিয়ম মেনেই কাজ করেছি। দুদকের বাউন্ডারি ওয়ালের গ্রিলনেট দিয়ে ১৬ ফিট উঁচুকরণ, মিডিয়া সেন্টারের ভেতরের কয়েকটি কক্ষ তৈরি এবং একটি ফ্লোরের মেরামত ও সংস্কার কাজে এক কোটি ১৯ লাখ ৯৯ হাজার ৫৬৬ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। কাজগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ফ্লোরে আস্তর উঠানো ও নবায়ন, থাইপার্টিশন করা, ফ্লোরের দরজা পরিবর্তন, ফলস ফিলিং স্থাপন, সেনেটারি ফিটিংস পরিবর্তন, রুমের পর্দা পরিবর্তন, নতুন টাইলস স্থাপন এবং সম্পূর্ণ ভবন রঙ করা। একইভাবে কাকরাইলের ২০তলা বিচারপতি ভবনের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য ভবনের উত্তর পাশের রাস্তায় দুটি নতুন গেট স্থাপন, ভবনের প্রধান চারটি গেটের সংস্কার ও মজবুতকরণ এবং ভবনের সীমানাপ্রাচীর ঊর্ধ্বমুখী করে নিরাপত্তা গ্রিল স্থাপনসহ মেরামত কাজে এক কোটি ৪৭ লাখ ৬৯ হাজার ৮২২ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। বিচারপতি ভবনের উন্নয়নমূলক কাজের একটি অংশের কাজ দরপত্র আহ্বানের আগে করা হয়েছে। আরেকটি অংশের কাজ শুরুর আগে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, এ ধরনের কাজের স্বচ্ছতা থাকে না। দুর্নীতির পথ সুগম হয়। যে কোনো কাজ করার আগে অবশ্যই দরপত্র আহ্বান করতে হবে। না হয় শুভংকরের ফাঁকি থেকে যায়। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য গণগূর্ত বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিবকে দপ্তরে পাওয়া যায়নি। তিনি ফোনে এই প্রতিবেদককে জানান, ওই কাজগুলো আমরা করেছি। তদন্ত হয়েছে ঠিকই। তবে অনিয়ম হয়েছে কিনা তা কাগজপত্র না দেখে বলা যাবে না।