মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রায় আনতে তিন চ্যালেঞ্জ

মূল্যস্ফীতির হার ভোক্তার জন্য সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনতে প্রধান তিনটি চ্যালেঞ্জ শনাক্ত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে আছে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর করা। এগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকলে মূল্যস্ফীতির হারও প্রত্যাশিত মাত্রায় নেমে আসবে বলে আশাবাদী কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থনীতির চলমান বাস্তবতায় দেশে বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হার ৩ থেকে ৪ শতাংশের মধ্যে থাকলে তা ভোক্তাদের কাছে সহনীয়। কিন্তু বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। যা সহনীয় মাত্রার চেয়ে ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি। মূল্যস্ফীতির হার সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনতে কমপক্ষে ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ কমাতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে মূল্যস্ফীতির হার ভোক্তার সহনীয় মাত্রা অর্থাৎ ৩ থেকে ৪ শতাংশের ওপরে আছে। ২০২২ সালের আগস্টে এ হার সাড়ে ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। এরপর থেকে সামান্য নামলেও বেশির ভাগ সময়ই ছিল ৯ শতাংশের ওপরে। গত বছরের জুলাইয়ে তা বেড়ে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে ওঠে। এরপর থেকে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানামুখী পদক্ষেপের ফলে মূল্যস্ফীতির হার কমতে থাকে। গত আগস্টে তা ৮ দশমিক ২৯ শতাংশে নেমেছে। যা সহনীয় মাত্রার চেয়ে ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ চলমান মূল্যস্ফীতির হার সহনীয় মাত্রার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি। সহনীয় মাত্রায় মূল্যস্ফীতির হার নামাতে আরও কমপক্ষে ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ কমাতে হবে। এই হার নামিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তিনটি প্রধান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। কারণ তিনটি নিয়ন্ত্রণে থাকলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। ইতোমধ্যে বিদেশি বিনিয়োগ আসার ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়লে ডলারের প্রবাহ বাড়বে। এতে বিনিয়োগ বৃদ্ধিজনিত আমদানি ব্যয় সামাল দিতে গেলেও বিনিময় হারের ক্ষেত্রে বাড়তি কোনো চাপ তৈরি হবে না। বিপরীতে বাড়বে কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হবে গতিশীল। তখন মূল্যস্ফীতির হার কমবে। আর ওই তিন চ্যালেঞ্জের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারালে কোনো খাতেই সফলতা আসবে না। বর্তমানে রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা বিদ্যমান। এ কারণে বিনিয়োগ গতিহীন। বিনিয়োগ আসছে কম। ফলে বিনিময় হার ঝুঁকির মুখে দাঁড়িয়ে আছে। যদিও বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর টাকা পাচারকারী ও হুন্ডিবাজরা পালিয়ে যাওয়ায় এসব প্রবণতা কমেছে। ফলে দেশে ডলারের প্রবাহ বেড়ে এখন বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে আগামী জুনের শেষে মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশে নেমে আসবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, একে ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে। তা হলে মুদ্রানীতি শিথিল করা যাবে। অন্যথায় মুদ্রানীতি শিথিল করলে আবার ঋণপ্রবাহ বাড়বে। একই সঙ্গে বাড়বে আমদানি ব্যয়ও। তখন বিনিময় হার অস্থির হয়ে উঠলে মূল্যস্ফীতির হারে চাপ বাড়বে। রিপোর্টে বলা হয়, সম্ভাব্য রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল থাকে। তখন এতে ভারসাম্যহীনতা তৈরি করবে। কাজেই সবকিছু নির্ভর করছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ফলে মূল্যস্ফীতির হার বার্ষিক তিন থেকে চার শতাংশের মধ্যে গ্রহণযোগ্য স্তরে নেমে আসলে নীতিগত সুদের হার এমনভাবে কমানো হবে যাতে প্রকৃত নীতিগত সুদ বার্ষিক দুই থেকে তিন শতাংশের মধ্যে থাকবে। তখন একটি কার্যকর হবে। বাজারে ঋণের সুদের হারও কমে যাবে। এতে বিনিয়োগ বাড়বে, কর্মসংস্থান বাড়বে। সার্বিক অর্থনীতি গতিশীল হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে মূল্যস্ফীতির হার কমানো অত্যন্ত জরুরি। কারণ দীর্ঘ সময় ধরে দেশে চড়া মূল্যস্ফীতির বৃত্তে আটকে আছে। এটা কমিয়ে স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হলে অর্থনীতিতে বহুমুখী সুফল মিলবে। স্বল্প আয়ের মানুষের দুর্ভোগ কমানো যাবে, ভোক্তার মধ্যে মূল্যস্ফীতির হার নিম্নপর্যায়ে বজায় রাখার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর আস্থার জš§ নেবে। নিম্ন এবং স্থিতিশীল মূল্যস্ফীতি শেষ পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।